Published: 12 সেপ্টে 2017
প্রাচীন কালের ভারতীয় অপরসায়ন
অপরসায়ন হল মধ্যযুগের একটি প্রাথমিক, অবৈজ্ঞানিক রসায়ন অনুশীলনের ধরণ যার উদ্দেশ্য ছিল ক্ষারক ধাতুগুলিকে সোনায় পরিণত করা। ভারতীয় অপরসায়নের ইতিহাস সিন্ধু সভ্যতায় মহেঞ্জোদারো ও হরোপ্পার সময় প্রাক-বৈদিক যুগ থেকে শুরু হয়েছিল। বছরের পর বছর ধরে বৈজ্ঞানিকদের প্রত্নতাত্ত্বিক খনন এই বিষয়ে সামান্য প্রমাণ দিয়েছে যে কিভাবে প্রাক ঐতিহাসিক যুগে প্রাচীন ভারতীয়রা তাদের রসায়ন-সম্পর্কিত জ্ঞান দ্রুততার সঙ্গে সংগ্রহ করেছে।
রসায়ন শব্দের আক্ষরিক অর্থ “নির্যাসের পন্থা”, যেটি সংস্কৃত শব্দে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং দক্ষিণ এশিয় পাঠ্যে “আলকেমি”র জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। এই শব্দটির ব্যুৎপত্তি 10ম শতাব্দীতে এবং বহু শতাব্দী পরে, জীবনকাল বাড়ানোর বিজ্ঞান বা “নবজীবন থেরাপি” ব্যাখ্যা করতে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার প্রথমদিকে ব্যবহৃত হয়েছিল।
ডেভিড জর্ডন হোয়াইটের রসায়ন (আলকেমি) [Rasāyana (Alchemy)] অনুযায়ী ভারতবর্ষে, প্রথমে ক্ষারক ধাতুগুলিকে সোনায় পরিণত করার জন্য ট্রান্সমিউটেশন বা রূপান্তরপ্রাপ্তির পদ্ধতি খোঁজার প্রয়াসে এবং পরবর্তিতে জীবনের স্পর্শমণি তৈরির জন্য অমরত্ব লাভের জন্য অপরসায়ন শুরু হয়েছিল। ভারভীয় অপরসায়ন বিস্তারের জন্য তান্ত্রিক ধর্মবিশ্বাস থেকেও তার গন্ধ ও সুবাস নিয়েছে। ধীরে ধীরে, পারদ ও অন্যান্য ধাতুর সমন্বয় এবং প্রস্তুতির সংখ্যা সাহায্যকারী অনুষঙ্গী হিসাবে চিকিৎসাক্ষেত্রে উদ্ভূত হয়।
প্রথমদিকের অপরসায়নবিদদের, বিশেষত তামিলনাড়ুর অপরসায়নবিদদের, আসল সোনা এবং রূপান্তরিত ‘সোনা’র মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা ছিল। ট্রান্সমিউটেশন অনুযায়ী: নিউ দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশানাল সেন্টার ফর আর্টসের বি. ভি. সুব্বারায়াপ্পা-র অ্যানসিয়েন্ট ইন্ডিয়ান কনসেপ্টস অ্যান্ড প্র্যাকটিসেস, অগস্থ্যের তামিল পাঠ্য অমুদাকালাইজ্ঞানাম-এ স্পষ্টভাবে বলা আছে যে, “যদি কৃত্রিম ‘সোনা’ এবং প্রাকৃতিক সোনাকে আলাদাভাবে দীর্ঘস্থায়ী উত্তাপ দেওয়া হয় বা ভষ্মীভবন করা হয়, তাহলে পূর্ববর্তীটির থেকে ভষ্ম বেড়োবে এবং আসল ধাতুটি বেড়িয়ে আসবে, অন্যদিকে এই পদ্ধতিতে আসল সোনা অবিচল থাকবে।”
ইতিহাসে পূর্বে অনাবিষ্কৃত উৎস এবং অপরসায়নের ওপর কাজের নিরিখে, হোয়াইটের বইটি প্রথমবার উল্লেখ করে যে হিন্দু অপরসায়ন এবং হথ যোগ-এর মধ্যযুগীয় শিক্ষা একই ব্যক্তিরা অনুশীলন করত। তিনি নাগার্জুনাচার্যের কথা বলেন, যিনি ছিলেন প্রাচীন কালের একজন বৌদ্ধভিক্ষু, তিনি বিখ্যাত নার্গাজুন ইউনির্ভাসিটি চালাতেন যেখানে অপরসায়ন শেখানো হত। নাগার্জুনাচার্য পারদকে সোনায় পরিবর্তন করার কথা বিশ্বাস করতেন।
এমনকি, প্রাচীন ভারতের পাঠ্যে এইধরণের অপরসায়নের একাধিক উল্লেখ পাওয়া যায়। গবেষকরা বলেন যে যদি প্রকৃকপক্ষেই অপরসায়ন ঘটত, তাহলে তারা একধরনের কম-শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া হত, যেটি শীতল একীভবন নামে জনপ্রিয়।