Published: 31 আগ 2017

কঙ্কণ-সোনার নিক্কন

সোনার গহনার একটি প্রাচীনতম এবং জনপ্রিয় ধরণ হল কাঁকন, যেটি ভারতীয় সংস্কৃতি এবং প্রথার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷ সোনা, কাঁচ, আইভরি (হস্তিদন্ত) এবং গালার মত বিস্তৃত পরিসরের উপদান দিয়ে বালা বা চুড়ি তৈরি হয়৷ এগুলি হাতের কব্জিকে সুসজ্জিত করে এবং বিভিন্ন জাত ও সম্প্রদায়ের বিবাহিত মহিলাদের বৈবাহিক প্রতীকচিহ্ন৷ বিয়ের কনের ষোলটি অলঙ্করণ সমন্বিত “ষোড়শোপচার” (সোলহা শৃঙ্গার)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি৷

প্রথাগতভাবে, ভারতীয় মহিলারা কখনই তাদের হাত খালি রাখেনা, এমনকি কোন চুড়ি পরিবর্তনের সময়ও নয়৷ তারা সবসময় তাদের হাত কোন পবিত্র সুতো বা তাদের শাড়ি আঁচল দিয়ে বেঁধে রাখে যতক্ষণ না পর্যন্ত নতুন সেটটি তারা পরছে৷

প্রাচীন ভারতে, চুড়ি বিক্রেতা ছিল কেবলমাত্র পুরুষ (বাবা, ভাই এবং স্বামী ব্যতীত), যে মহিলাদের হাত স্পর্শ করার বা ধরার অনুমতি পেত৷ প্রথাগত নিয়মে খুব কমই মহিলাদের বাড়ির বাইরে বেড়ানোর অনুমতি ছিল, ফলত চুড়ি বিক্রেতা তার সরঞ্জাম নিয়ে তাদের বাড়িতেই আসত৷ এই প্রবন্ধে, আমরা প্রথাগত সোনার চুড়ি দেখব যা বিবাহ অথবা অন্যান্য বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করা হয়-

 

পিচোরি: এই সোনার পাতলা চুড়িগুলি সাধারণত পোক্ত করার জন্য 24 ক্যারেট সোনার সাথে তামার ক্ষার মিশিয়ে তৈরি হয়৷ এই চুড়িগুলি ফুল বা জীবজন্তুর আদল বা ধর্মীয় প্রসঙ্গ দিয়ে সজ্জিত হয়৷ মহারাষ্ট্রীয় পাত্রী বা বিবাহিত মহিলারা তাদের সবুজ রঙের কাঁচের চুড়ির সাথে এক সেট পিচোরি পরে৷

মহারাষ্ট্রের আরেকটি জনপ্রিয় বালা হল তোড়া৷ এগুলি সোনার তৈরি মোটা বালা, যেগুলিতে বিভিন্ন ডিজাইন করা থাকে৷ বিয়ের কনে বা ধনী মহারাষ্ট্রীয় মহিলা অন্ততপক্ষে দু’টি তোড়া পরে৷

পাছেলি: গোখরু নামেও পরিচিত, পাছেলি চুড়িগুলি রাজস্থানী গহনার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷ এই চুড়িগুলি বাইরের দিকে প্রস্থ 10 সেমির মত হয়, আর এক্ষেত্রে এক সারি ছোট প্রক্ষিপ্ত অংশ থাকে যেটিতে প্রায়ই একগুচ্ছ মুক্তোর দানা বা হীরে খচিত থাকে৷ ধাতুর মধ্যে থাকে মীনাকরী কাজ, এই চুড়িগুলি নিজেই গহনার প্রাচুয্যে এক অতুলনীয় উদাহরণ, তবে সাধারণত এক সারি চুড়ির সাথে একত্রিত করে বা ব্রেসলেটের মাঝে একটি এই চুড়ি পরে৷ পিচোড়ির মতই, এই চুড়িগুলি অন্যান্য কাঁচ, গালা বা আইভরির চুড়ির সাথে পরা যায়৷

হাভাল্লা কাট্টু: মালাবার উপকূলের তীর থেকে পাওয়া প্রবালের পুঁতি এবং সোনার ফুলের সাথে পাকানো হয় এই হাভাল্লা কাট্টু, যা প্রবালের চুড়ি নামেও পরিচিত৷ এই চু়ড়িগুলি ম্যাঙ্গালোরের সংস্কৃতির একটি অংশ এবং ইন্দো-রূশীয় বাণিজ্য থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে বিবেচিত যেহেতু প্রবালের পুঁতি সিলন উপকূলে এবং ভূমধ্যসাগরে উৎপন্ন হত৷

উত্তর ভারত বিভিন্ন ধরণের চুড়ি ও ব্রেসলেট পাওয়া যায়, যার অন্তর্ভুক্ত চু়ড়ি, বাঙ্গড়ি, নউগারি, কঙ্গন, পহুনচু, গাইরা, পাটরি, বার্তানা এবং দাস্তবন্দ৷
 

কাড়া: এগুলি পুরুষের সাথে সাথে মহিলারাও পরে৷ কাড়া খাঁটি সোনার যেমন হয়, তেমনি আবার ফাঁপা হয় যেটি গালা দিয়ে ভর্তি থাকে৷ কাড়ার শেষ প্রান্তটিতে ময়ূর, হাতি, সর্প এবং মকরের ডিজাইন/আকার থাকে৷ ভারতীয় মহিলারা কাড়ার সাথে চুড়ির মত হাতের অন্যান্য অলঙ্কার পরে, কিন্তু পুরুষরা কেবলমাত্র কাড়াই পরে৷

শিখরা, স্টিল বা লোহার কাড়া পরে যা ক্রমাগত তাদের পৃথিবীতে ভগবানের লক্ষ্য সম্পাদন করার দায়িত্ব মনে করিয়ে দেয়৷

চুড়ির সাথে অতিরিক্তভাবে, মহিলারা তাদের বাহু কটক (আর্মলেট) দিয়ে সজ্জিত করে যেগুলি বাজু, বাজু-বন্দ, ভাঙ্কি নামে পরিচিত, এগুলি বিয়ের কনেরাও পরে৷

এই ধরণের আনুষঙ্গী ভারতে প্রচণ্ড জনপ্রিয় এবং প্রায়ই ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্য বহন করে৷ ঝলমলে সোনার চুড়ি দেখাও যায়-তার নিক্কন শোনাও যায়-এগুলি যেমন মহিলাদের হাত সুন্দরভাবে সাজায় আর তেমনই দেশ জুড়ে বিশেষ উৎসব এবং মঙ্গলময় অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য এগুলি পরা হয়৷