Published: 05 সেপ্টে 2017
ভগবানের শৃঙ্গার
ভারতের বেশিরভাগ সংস্কৃতিতে তথা এশিয় সম্প্রদায়গুলির প্রতিটি পরিবারে “ইষ্ট দেবতা” আছে যার আরাধনা করা হয় এবং এই আচার পরিবারের উত্তরসূরিদের অর্পন করা হয়। এই দেবী ও দেবতাদের আরাধনায়, বেশিরভাগ সংস্কৃতিই প্রার্থনা করার জন্য এবং আশিষ পাওয়ার জন্য তাদের মূর্তি বাড়িতে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করে।
এই দেবমূর্তি প্রায়সই সোনার অলঙ্কার দিয়ে সাজানো হয় যা পূজার সময় প্রত্যহ পরিষ্কার করা হয়। এই আচারের পিছনে বিভিন্ন রহস্যময় এবং পবিত্র বিশ্বাস রয়েছে:
- দেবতাকে তুষ্ট করার এবং ভালোবাসা প্রদর্শনের ভঙ্গী স্বরূপ, হিন্দুরা বিশেষত তাদের দেবী দেবতাকে সোনার অলঙ্কারে সজ্জিত করে।
- একটি জনপ্রিয় বিশ্বাস আছে যে যত আপনি দেবতাকে সাজাবেন, তত আপনার ভক্তিতে তারা খুশি হবে।
- এমনকি উপাসক তাদের ঈশ্বরকে মূল্যবান অলঙ্কারে অলঙ্কৃত করার সময় সাজানোর অনুভূতি অনুভব করে।
- যদি আমরা শব্দতত্ত্ব দেখি, সংস্কৃততে শৃঙ্গার শব্দের অর্থ হল ‘ভালোবাসা’ এবং এটি প্রায়ই সৌন্দর্যের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়। একই কারণবশত, যখন আমরা আমাদের দেবতাদের মূর্তিগুলি সাজাই, তখন সেটি দেবতার প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে।
যদি আপনি চারপাশে তাকান, হিন্দু সংস্কৃতির বেশিরভাগ দেবী দেবতাকে সোনার অলঙ্কারে সাজানো হয়। এই কারণেই প্রাচীনকাল থেকে, হলুদ ধাতু অত্যন্ত মূল্যবান ধাতু হিসাবে বিবেচিত। তবে, যখন এটি দেবতার প্রতি ভক্তিমূলক অনুভূতির বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, তখন ভক্তরা মূর্তি সাজানোর জন্য সেই ধাতুর গুণমানের সাথে আপস করে না।
অলঙ্কারগুলি অলঙ্করণের ঊর্ধ্বে চলে যায় আর আমাদের প্রিয় দেবতাদের স্তুতি গায়। হিন্দু সংস্কৃতির প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী সোনায় তৈরি এই অলঙ্কারগুলির নিজস্ব তাৎপর্য আছে। অলঙ্করণের গুরুত্বের পিছনে থাকা কিছু বিশ্বাস সম্পর্কে নিচে দেওয়া হল:
- মাঙ্গ টীকা: পুরাণের পরামর্শ অনুযায়ী মাঙ্গ টীকা তৃতীয় নেত্রের প্রতিনিধি এবং মনে করা হয় এটি আধ্যাত্মিক শক্তি উন্নত করে।
- নাকছাবি: নাকছাবি শক্তি ও সাহসীকতার প্রতীক বলে বিশ্বাস, যার কারণে মা শক্তিকে সবসময় বড় নাকছাবি পরে দেখা যায়।
- মুকুট: ‘কর্তৃত্ব’ বা ‘সৃষ্টিকর্তা’কে প্রতীকায়িত করে মুকুট। তাই আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা হয়ে আমাদের দেবী দেবতারা মুকুটে সম্মানিত হয়।
- হার বা নেকলেস: হিন্দু ঐতিহ্য অনুযায়ী, ‘হার’ হল ‘শ্রদ্ধা’ বা ‘জয়’-এর প্রতীক বা প্রতিনিধি। আধুনিক ভারতেও হার শ্রদ্ধার প্রতীকস্বরূপ জনপ্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হয়। একই কারণে, আমাদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য পরমেশ্বরকে হার দিয়ে সাজানো হয়।
এই কারণগুলি ব্যাখ্যা করে দেবী দেবতার শৃঙ্গার ব্যাপকভাবে প্রায় সমস্ত হিন্দু পরিবারগুলিতে প্রজন্ম ধরে অনুসৃত হয়ে আসছে। ভক্তরা সাধারণত তাদের দেবতার প্রতিমূর্তিকে সোনা দিয়ে সাজায়, তবে যদি আর্থিক অবস্থা বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে পরমেশ্বরকে আপনার ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পরবর্তি সেরা পথ হল ফুল নিবেদন।