Published: 27 সেপ্টে 2017
সোনা পরিশোধনের ইতিহাস
মনে করা হয় সোনা ও মানবজাতির মধ্যে ভালোবাসার সূত্রপাত সোনা গলানোর মধ্য দিয়ে সেই খ্রি.পূ. 3000-6000অব্দ পুরনো৷ আর.জে. ফোর্বসের প্রাচীন প্রযুক্তির চর্চা (Studies in Ancient Technology) অনুযায়ী, কৌশলটি শুরু হয়েছিল মেসোপটেমিয়া বা সিরিয়া৷ প্রাচীন গ্রিসে, হেরাক্লিটাস এই বিষয়ে লিখেছিলেন৷
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্লিটানিকার মতে, ‘খ্রি.পূ. 2,300 অব্দ থেকে মুক্ত হওয়া মিশরীয় দেওয়াল সোনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরের রিফাইনিং (পরিশুদ্ধকরণ) এবং মেকানিকাল (যান্ত্রিক) কাজ দেখিয়েছে৷ প্রাচীন মিশরীয়রা নদীর তীরগুলিতে স্থাপনকারী খনিবিদ্যা (মাইনিং) ব্যবহার করে সোনা নিষ্কাশন করত-এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে নিজস্ব ঘনত্ব অনুসারে অবক্ষেপনের প্রক্রিয়ার সময় জমা হওয়া খনিজগুলিকে নদীর তীর থেকে খনন করা হয়৷ অন্য ভাবে বললে, মিশর নদীর বালিতে পাওয়া সোনার কণার ব্যবহার করেছিল৷
একবার বালুকণিকা সংগ্রহীত হয়ে গেলে, জলের সাথে তুলনামূলক পাতলা নদীর বালি দ্বারা সোনা ঘনীভূত হত, এইভাবে ঘন সোনার কণা তলায় পরে থাকত৷ এই কণাগুলিকে পুনরায় গলন বা মেল্টিংয়ের মাধ্যমে শুদ্ধ করা হত এবং তারপর পছন্দ মত আকৃতি দেওয়া হত৷ BCফোর্বস নথিকৃত করেছেন যে খ্রি.পূ. 2000 অব্দের মধ্যে, রূপো সরিয়ে সোনা নিষ্কাশনের জন্য, লবনের সাথে সংকর ধাতুর বিশুদ্ধ করার পদ্ধতি আবিষ্কার হয়ে গিয়েছিল৷
সোনা বিশুদ্ধকরণের এই প্রক্রিয়াগুলি ক্রমে খ্রিষ্টীয় 100 শতাব্দির মধ্যে স্প্যানিশদের কাছে পৌঁছায়, যারা এই মূল্যবান ধাতুর প্রতি আজকের ভারতীয়দের মতই বিহ্বল ছিল৷ সোনার আকরিকের প্রক্রিয়াকরণ: মাইক ডি. অ্যাডামসের সম্পাদিত প্রজেক্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অপারেশানস (Project Development and Operations) অনুমান করেছেন যে স্পেনে সেইসময় সোনা খননের জন্য প্রায় 40,000 ক্রীতদাস নিয়োগ করা হয়েছিল৷
খ্রীস্টান ধর্মের আবির্ভাবের ফলে সোনার চাহিদাও 10ম শতাব্দি পর্যন্ত বেড়ে যায়, এটি সেই সময় যখন সংমিশ্রণ (amalgamation)আবিষ্কৃত হয়- এটি একটি প্রক্রিয়া যেখানে বালুকণা থেকে সোনার ক্ষুদ্র কণা ধরতে পারদ ব্যবহার করা হয়৷ আর তারপর খুব তাড়াতাড়ি, সোনা খনন নতুন বিশ্বের অনুপ্রবেশের সাথে বর্ণনামূলক উন্নয়ন দেখে৷ দ্রুত, বিস্তর পরিসরে সোনা খনন নবীনতর প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই সমস্ত এলাকায় ছড়িয়ে পরে যেখানে সোনার খনিগুলি আবিষ্কৃত হয়েছিল যেমন ব্রাজিল, রাশিয়ার ইউরাল পর্বতমালা, সিবেরিয়া এবং ক্যালিফোর্নিয়া আর সবথেকে বড় ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার উইটওয়াটার্সরান৷
দক্ষিণ আফ্রিকার সোনার খনির আবিষ্কার সায়ানাইডেশান প্রক্রিয়ার আবিষ্কারের সাথে কাকতালিয়ভাবে যুক্ত, যা নিম্ন-মানের আকরিকের থেকে সোনা পুনরুদ্ধার সম্ভব করেছে আর আজকের দিনে সোনা নিষ্কাশনে লিচিং প্রক্রিয়ায অত্যন্ত জনপ্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হয়৷
ই.বি. মিলারের ক্লোরিন গ্যাসের (1867 সালে ব্রিটেনে পেটেন্ট লাভ করে) সাথে অশুদ্ধ সোনা পরিশুদ্ধ করার পদ্ধতি এবং ইমিল ওহলউইলের ইলেকট্রো-রিফাইনিং প্রক্রিয়া (1878 সালে জার্মানির হেমবার্গে প্রথম উত্থাপিত হয়)-র সাথে খাঁটি সোনার উন্নয়নের প্রযুক্তি বাজার সরগরম করে তোলে৷ এমনকি, 99.99 শতাংশ বিশুদ্ধতার সমেত সোনা এই প্রক্রিয়াগুলির সমাহারের মাধ্যমে তৈরি হয়৷
হঠাৎ করে, নিয়মিতভাবে সোনা বিশুদ্ধ করা সহজতর এবং তুলনামূলক স্বল্প ব্যয়ের হয়ে যায়৷ এই দুটি পদ্ধতি আজকের দিনে সোনা পরিশুদ্ধকরণের অন্যতম জনপ্রিয় পদ্ধতি হিসাবে প্রচলিত৷