Published: 20 ফেব্রু 2018
একটি বিশ্বাসের বিষয়
বিশ্বস্ত মানুষ হিসাবে একজন মানুষ গভীরভাবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে সেটি সমষ্টিগতও হতে পারে অথবা সামাজিক অভিজ্ঞতাও হতে পারে। এই বিশ্বাসের অনেকগুলিই ভারতে পালিত হয়ে চলেছে যাদের সোনার সাথে নিজস্ব নির্দিষ্ট বন্ধন রয়েছে এবং এক্ষেত্রে সামান্য আশ্চর্যের বিষয় হল যে এই ধাতুর বিশ্বাসযোগ্য দর্শন হল এটি মূল্যবান, ক্ষয়রোধক এবং সুন্দর।
হিন্দু শাস্ত্রে সোনার আদি উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদ সংহিতায়, নির্দিষ্ট উৎসর্গীকৃত আচার নীতির জন্য সোনার নৌকার ব্যাখ্যায়। আরেকটি প্রাচীন হিন্দু পাঠ্য অর্থশাস্ত্র “পদ্মের রংয়ের মত, কোমল, দ্যুতিমান এবং কোন শব্দ উৎপন্ন করেনা” এমন বস্তু হিসাবে সোনাকে ব্যাখ্যা করেছিল। হিন্দুধর্ম-ভিত্তিক লোক কথা এবং পুরানকথা সমেত এই পাঠ্যগুলি সোনার মূল্য বোঝানোর জন্য যথেষ্ট-এগুলি তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রতীক হিসাবে জানাচ্ছে কোন সভ্যতা কিভাবে এই ধাতুটির ব্যবহার করত। ‘অক্ষয় তৃতীয়া’ উৎসবটি হিন্দু ও জৈন উভয় ধর্মের মানুষই উদযাপন করে ভিন্ন কারণে। উভয় সম্প্রদায়ই এই দিনটিকে কোন ব্যবসা শুরু করার জন্য একটি শুভ দিন বলে বিবেচনা করে এবং সমৃদ্ধির আসায় অনেক পরিমাণে সোনা ক্রয়ও শুভ বলে বিবেচিত হয়। মূল্য ও সৌন্দর্যের সাথে সোনার সংযুক্তি ভারতের অর্চনার স্থলস্বরূপ কিছু মন্দিরের স্থাপত্যেও দেখা যায়। সুশান বিশ্বনাথের লেখা কেরালার খ্রিস্টান (The Christians of Kerala) বইটি কেরালায় থাকা সিরিয় খ্রিষ্টানদের জীবন রীতি নিয়ে এক বিজ্ঞানসম্মত বিবরণ। বিশ্বনাথের পাণ্ডিত্য থেকেই আমরা জেনেছি যে কেরালার এই ধর্মপ্রাণা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক জীবন গভীরভাবে হিন্দু দর্শনের জীবনের প্রথাগুলির সাথে ছেদ করে। এই পয়েন্ট থেকেই জানা যায় উভয় গোষ্ঠীরই সোনার সাথে সাংস্কৃতিক সংযোগ ঔপনিবেশিক দ্বন্দ্বের বহু শতাব্দি আগে থেকে শুরু হয়েছিল।
এই সমস্ত ইতিহাসই আমাদের উৎসর্গীকৃত নৈবেদ্য হিসাবে সোনার মূল্য বুঝতে সাহায্য করে। অনেক ভক্তই নিয়মিত নৈবেদ্য হিসাবে মন্দিরে সোনা দেওয়ার ফলে মন্দিরগুলি এখন অনির্ধারিত পরিমাণ এই ধাতু রাখার নতুন গৃহ হয়ে উঠেছে, যা মন্দির বোর্ড মন্দির সংস্কারে এবং দাতব্য কার্যকলাপে ব্যবহার করে। ভারতে, মনে হয় আমরা যে সময় বুঝি যে শুদ্ধ, সংখ্যায় ব্যক্ত করা যায় না এমন নিষ্ঠার ওপর ভিত্তি করে ঈশ্বরের থেকে আশিষ পেতে পারি, তখনই আমরা আমাদের ভক্তি সোনার বিকল্পে পূরণ করতে চাই।