Published: 11 সেপ্টে 2018
মীনাকরী স্টাইলের সোনার গহনার সঙ্গে পরিচয়
গহনায় রঙের দীপ্তি যেকোন রূপকে দীপ্তোজ্জ্বল করে, তা অকারণেই হোক বা কোন বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য সংরক্ষিত৷
কলাইয়ের কাজের জন্য সোনাকে পছন্দ করা হয় কারণ এটি সেই মীনার কাজটিকে অন্য ধাতুর থেকে বেশি ভালো ধরতে পারে এবং সোনার প্রাকৃতিক দীপ্তি রঙগুলিকে আরো সুন্দরভাবে তুলে ধরে৷
ভারতে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় কলাইয়ের কাজ হল মীনাকরী, যেক্ষেত্রে ঔজ্জ্বল্য বাড়ানোর জন্য সোনার তলটিকে অন্যান্য সুন্দর রঙ দিয়ে অলঙ্কৃত করা হয়৷ সহজে বললে, ধাতব গহনার তলগুলিকে রঙ করা হয়, সজ্জিত করা হয় এবং চুল্লীতে জ্বালানো হয় যেখানে রঙগুলি একীভূত হয় এবং একটি অপূর্ব সুন্দর উপাদান তৈরি করে৷
মীনাকরীর দক্ষ মুঘল শিল্পের উদ্ভব এবং ইতিহাসব সম্পর্কে আরো জানুন৷
বেশিরভাগ জাড়াও এবং কুন্দনের গহনায় দেখতে পাওয়া, এই অনবদ্য শিল্পটি অতিমাত্রায় নিখুঁত এবং অত্যন্ত দৃষ্টি-আকর্ষক৷ চলুন এই শিল্পকলার নিগুঢ়তাগুলি দেখে নেওয়া যাক৷
মীনাকরীর প্রকার
মীনাকরী কেবলমাত্র প্রথাগত গহনা প্রস্তুতিতেই ব্যবহৃত হয় না, এটি চাবির চেন, ভাস বা কলস, বাটি, দেওয়াল সাজানোর উপকরণের মত আরো অনেক জিনিস অলঙ্কৃত করতেও ব্যবহৃত হয়৷ মূলত দু’ধরণের মীনাকরী কাজ হয় একটি হল ‘এক রং খুলা’ এবং আরেকটি হল ‘পঞ্চরঙিমীনা’৷ প্রথমটিতে একটি মীনে করা রং ব্যবহৃত হয় এবং বিয়ের গহনা প্রস্তুতির জন্য বেশি জনপ্রিয়, অন্যদিকে প্রথাগত রূপদানের জন্য পরেরটিতে পাঁচটি রঙের সমাহার ব্যবহার করা হয়৷
এক রঙ খুলা শৈলির ব্রেসলেট
মীনা কাজের প্রক্রিয়া
যেহেতু মীনা বা কলাইয়ের কাজটি একটি জটিল প্রক্রিয়া, তাই প্রতিটি গহনা সম্পূর্ণ করার আগে একাধিক কুশলীদের কাছে যায়৷ প্রক্রিয়াটি শুরু হয় একজন উচ্চমাত্রার চিতেরা (ডিজাইনার) সাহায্য নিয়ে, যে ডিজাইন প্রস্তুত করে এবং সেটিকে পাঠায় সোনার-এর (স্বর্ণকার) কাছে, যে কলংকারের (খোদাইকারী) সাহায্যে ডিজাইন মিনা করে৷
গহনাটি শেষে পালিশ করে ঘোটনাওয়ালা (পালিশ করে যে ব্যক্তি) এবং সেটিকে কুন্দনসাজের (রত্ন সেটার) হাতে পাঠায় যে কুন্দন থাকলে সেটি সেট করে৷ সবশেষে, অন্তিম পরিমার্জনার জন্য পণ্যটি পটুয়ার (স্ট্রিংগার) হাতে তুলে দেওয়া হয়৷ এটিই সম্পূর্ণ এবং বিস্তৃত মীনাকরী প্রক্রিয়া৷
এই গহনাটি তারপর চুল্লীতে রাখে জ্বালানো হয় বা কঠিনীভূত করা হয়৷ একবার ধাতুর মধ্যে রঙ ধরে গেলে, আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য সেটিকে লেবু এবং তেঁতুলের মিশ্রণ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করা হয়৷
মীনের কাজের জন্য ব্যবহৃত রঙের পিছনে থাকা বিজ্ঞান
মীনার রঙ হিসাবে মেটাল অক্সাইড ব্যবহৃত হয়, যেটিকে সঠিক পরিমাণে চূর্ণ কাঁচের সঙ্গে মেশানো হয়৷ অক্সাইড অর্জিত রঙের আভা নিয়ন্ত্রণ করে; এই মিশ্রণগুলিকে চুল্লীতে না দেওয়া পর্যন্ত তাদের কাঁচা অবস্থায় তারা তাদের আসল রঙের বৈচিত্র্য দেখায় না৷ এই রঙগুলির উৎস হয় ভারতের অমৃতসর অথবা ফ্রান্স অথবা জার্মানি৷
মুঘলরা রাজস্থানে প্রথম নিয়ে এলেও, সারা ভারত জুড়ে মীনাকরী কাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসাবে প্রচুর পরিমাণে গহনা এবং ঘর সাজানোর উপকরণে ব্যবহৃত হয়৷ এতোটাই বেশি যে লক্ষ্মৌ, পাঞ্জাব, বেনারস এবং জয়পুর সমেত ভারতের বিভিন্ন শহরগুলি মীনার কাজে তাদের নিজস্ব শৈলির উন্নত করে এবং তাদের চমৎকার সৃষ্টির জন্য বিশ্ব জুড়ে পরিচিতি লাভ করে৷