Published: 08 সেপ্টে 2017
দক্ষিণভারতে সোনার গুরুত্ব
ভারতের স্বর্ণ প্রীতি কোন গোপন কথা নয়৷ কিন্তু এই প্রসঙ্গে দক্ষিণ ভারত সাধারণত বিশেষ উল্লেখ পায়৷
আপনি কি জানেন যে রোমান সাম্রাজ্য কালে, কোচি থেকে বিভিন্ন মশলা নেওয়ার জন্য সোনা মুদ্রা হিসাবে ব্যবহৃত হত?
দীর্ঘ সময়ের জন্য এখন, সোনা সারা দক্ষিণ ভারতের সংস্কৃতি জুড়ে এক তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং তাদের প্রথায় এক আড়ম্বর যোগ করে৷
সোনা ও উৎসব
সোনা, ধাতু ও রং হিসাবে কেরালীয় নববর্ষ-ভিষুতে অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করে৷ সোনা সাধারণত ‘ভিষুকন্নি’ সাজাতে ব্যবহার করা হয়-এটি সোনা, ফুল, ফল, ডাল এবং আরো অনেক কিছু দিয়ে সাজানো হয়৷ ভিষুকন্নির সাথে আপনি ধন-সম্পত্তি ও সমৃদ্ধির জন্য নিজের দৃষ্টি উন্মিলিত করেন যা আগামি বছরে আপনার জীবন পূর্ণ করবে৷
‘অক্ষয় তৃতীয়া’ তামিলনাড়ুতে গভীর ভাবাবেগ ও জাঁকজমকের সাথে উদযাপন করা হয়৷ লোকেরা এইদিনটিকে সোনা কেনার জন্য বছরের অন্যতম একটি শুভ দিন হিসাবে গণ্য করে এবং বিয়ে বা অন্যান্য শুভ কাজ অক্ষয় তৃতীয়াতেই করার চেষ্টা করে৷ কথিত আছে এই কার্যের সাথে কারোর জীবনে আনন্দ এবং সমৃদ্ধি আসে৷ ফলে এই দিনে মানুষ সোনা কেনে, তাদের ভালোবাসার মানুষদের উপহার দেয় এবং যাদের প্রয়োজন তাদের দানও করে৷
অনুষঙ্গী: 8টি অনুষ্ঠান যেখানে সোনা একটি আদর্শ উপহার
সোনা ও বিয়ে
2017 সালের 24শে জানুয়ারীতে বিশ্ব সোনা কাউন্সিলের দেওয়া ভারতীয় সোনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেরালায় একজন বিয়ের কনের গায়ের গহনার ওজন 320 গ্রাম হয়৷ তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশের বিয়ের কনেদের বিয়েতে সোনার ওজন গড়ে 300 গ্রাম হয়৷
দক্ষিণ ভারতে বিয়ের কনেকে বিয়ের দিন মাথা থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত সোনা দিয়ে সাজানো হয়৷ মা-বাবা তাদের মেয়েকে-অর্থাৎ বিয়ের কনেকে- প্রচুর পরিমাণ সোনা দেয় তার বিয়েতে৷ এইভাবেই, মা-বাবা তাদের মেয়ের ভবিষ্যত তার নতুন বাড়িতে সুরক্ষিত করে৷
নিখুঁত সোনার কাজ করা কাসাভু শাড়ি বিয়ের পোশাক হিসাবে দক্ষিণ ভারতে অত্যন্ত প্রচলিত৷ বিয়ের কনেকে সোনায় যেন জমকালো লাগে এবং তার বিশেষ দিনে তাকে যেন স্বর্গীয় মনে হয়৷
কেরালায় আরেকটি প্রথা আছে যেখানে বরপক্ষ একটি শাড়ি কেনে যার নাম ‘মানথরাখোদিস’-এটিও সোনায় খচিত থাকে৷ এই শাড়ির সুতো নিয়ে ‘মঙ্গলসূত্র’ হিসাবে কনের গলায় বেঁধে দেওয়া হয়৷
তামিলনাড়ুতে মঙ্গলসুত্রকে বলা হয় ‘থালি’, যার ওজন 4 থেকে 8 গ্রাম মত হয়৷ এটি সোনার চেনের সাথে পরিধান করা হয়, অনেকে এই থালিতে আরও অতিরিক্ত সংযোজন করে৷ কেউ সোনার কয়েন যোগ করে আবার কেউ মূল থালিতে সোনার চাকতি এবং বোট্টু যোগ করে৷
থালিতে দেওয়া প্রতিটি প্রসঙ্গ বা ডিজাইনই কিছু না কিছুকে প্রতিনিধিত্ব করে৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সোনার থালিতে খোদাই করা শিবলিঙ্গ প্রাচুয্যকে চিহ্নিত করে যেখানে আবার খোদাই করা তুলসি চিহ্নিত করে বিশুদ্ধতাকে৷
অন্ধ্রপ্রদেশের মঙ্গলসুত্রে, সাধারণত দুটি সোনার কয়েন থাকে৷ এই তেলেগু মঙ্গলসুত্রটি ‘পুস্তেলু’ নামেও পরিচিত৷ প্রথা অনুযায়ী, এই কয়েনের একটি বরপক্ষের থেকে আসে আর অন্য কনে পক্ষের থেকে এবং দুটিকে পুঁতি দিয়ে আলাদা করা হয়৷
সোনা ও লোকাচার
পৈতে বা অন্নপ্রাশন একটি দক্ষিণ ভারতীয় প্রথা যেখানে আত্মীয় পরিজন এবং বন্ধুরা আহ্বায়ককে সোনার জিনিস উপহার দেয়৷ অন্নপ্রাশন হল সেই অনুষ্ঠান যেখানে বাচ্চা প্রথম কোন শক্ত খাবার খায়৷ অনুষ্ঠানের সময়, বাচ্চার বাবা একটি সোনার আংটি প্রতিটি খাবারের মধ্যে ডোবায়৷ তারপর সেই আংটিটি বাচ্চার জিহ্বে ঠেকানো হয়৷
সোনা এবং জহুরি
ভারতের অনেক বড় বড় সোনা বিক্রেতা কেরালা থেকে আসে৷ সোনার প্রচুর যোগানের ফলে, এই জহুরিরা সোনার চাহিদা বাড়লে তা ধরে রাখতে পারে, যা এই প্রতিযোগীতামূলক সোনার মূল্যের একটি কারণ৷ কেরালায় সোনার চাহিদা এতটাই বেশি যে খুব শীঘ্র এটি কোচিনের সোনার আড়ত হয়ে উঠতে চলেছে বিশ্বের জনপ্রিয় দুবাইয়ের সোনার বাজারের মত!
পরের বার আপনার কাছে কোন সোনার গহনা থাকলে, সোনার সাথে আমাদের এই দীর্ঘ-স্থায়ী বন্ধনটি সম্পর্কে এক মুহুর্ত ভেবে নিন; সেই বন্ধন যা সমস্ত দূরত্ব মুছে দেয়৷
দক্ষিণ ভারতের দুটি রাজ্য কেরালা ও তামিলনাড়ু তাদের সোনার বাজারের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়৷ দক্ষিণ ভারত সোনার বাজার শেয়ারের 40%এর খুব বড় অবদান রাখে৷ এই পূর্ব ও পশ্চিমের মোট অবদানের থেকেও বেশি৷