Published: 29 অক্টো 2021
আপনার অবসরের সময় সোনা কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে?
অবসর আপনার সক্রিয় কর্মজীবনের সমাপ্তি চিহ্নিত করে, যখন আপনার নিয়মিত উপার্জন বন্ধ হয়ে যায় । তারপর থেকে নিজের খরচ চালানোর জন্য আপনাকে নিজের সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও বিকল্প উপার্জনের (যেমন, সম্পত্তির ভাড়া বাবদ আয়) উপর মূলত নির্ভর করতে হয়। অবসরের গড় বয়স ৬০ বছর ধরলে পরিকল্পনা করার জন্য আপনার হাতে যথেষ্ট সময় থাকে এবং সোনায় বিনিয়োগ সেক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
অবসরকালীন তহবিলের জন্য বিনিয়োগ পোর্টফোলিও
মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে অপরিবর্তনশীল উপার্জনের জন্য বিনিয়োগ কতটা কার্যকরী, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই উদ্বেগ থাকে। তেজি বাজারে মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে এই উদ্বেগের কিছুটা মার্কেট-লিঙ্কড বিনিয়োগগুলো মেটাতে পারে। বিনিয়োগ পোর্টফোলিওতে ডেট-ইক্যুইটির মিশেল কাগজকলমে আপনার অবসরকালীন তহবিলের জন্য যথেষ্ট বলে মনে হতে পারে। যদিও, পোর্টফোলিওতে সোনা যোগ করলে তা আপনাকে দীর্ঘ মেয়াদে সাহায্য করতে পারে। দেখে নিন কীভাবে:
অবসর পরিকল্পনায় সোনা কেন গুরুত্বপূর্ণ ?
দীর্ঘ মেয়াদি লাভ: দীর্ঘ মেয়াদে, ১০ বছরে (৩১ ডিসেম্বর ২০১০ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০) গড় বার্ষিক লাভ প্রদানের ক্ষেত্রে সোনা অন্য অনেক সম্পদকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। বিশেষত গত ৫ বছরে নগদ, S&P BSE ভারত সরকার বন্ড ক্রিসিল কর্পোরেশন বন্ড এবং ব্লুমবার্গ কমোডি়টিস ইনডেক্সের তুলনায় সোনা বেশি কার্যকারিতা দেখিয়েছে। গত দুই বছরে সোনা S&P BSE ইনডেক্সকেও ছাপিয়ে গিয়েছে এবং বিএসই ইনডেক্সের তুলনায় সোনার বৃদ্ধি ছিল প্রায় ৮%। তাই সোনায় আগে থেকেই বিনিয়োগ করলে তা আপনাকে অতিরিক্ত লাভ দেবে এবং অবসর পরিকল্পনায় সাহায্য করবে।
মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবন্ধক: ১৯৮১ সাল থেকে সোনায় গড় বার্ষিক মুনাফা (AAR) ওই একই সময়ে ভারতের উপভোক্তা মূল্য সূচকের থেকে ১০ শতাংশ এগিয়ে রয়েছে। সাধারণত সোনা মুদ্রাস্ফীতিকে ছাপিয়ে গিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। যদিও এটি শুধুমাত্র দীর্ঘ মেয়াদে ঘটে থাকে, কারণ বাজারে অনিশ্চয়তার জন্য স্বল্প মেয়াদে সোনার দাম ওঠা-নামা করে। অবসর পরিকল্পনা একটি দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া হওয়ায় সেক্ষেত্রে সোনায় কিছুটা বিনিয়োগ করা উচিত, কারণ সোনা মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবন্ধক হিসেবে পরিচিত।
নিরাপত্তা ও বৈচিত্র: সোনায় বিনিয়োগ আপনার পোর্টফোলিওতে নিরাপত্তা ও বৈচিত্র আনে। অন্যান্য খাতে, যেমন শেয়ারে বিনিয়োগ করলে তা বাজারের অবস্থার প্রেক্ষিতে উঠতে বা পড়তে পারে, কিন্তু সেদিক দিয়ে সোনায় বিনিয়োগ অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। যে পোর্টফোলিওতে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ রয়েছে এবং ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে সোনা সঠিক পছন্দ হতে পারে, যেহেতু এটি অন্য অধিকাংশ বিনিয়োগের বিপরীতধর্মী। শেয়ার মার্কেট পড়লে সোনার দাম বাড়ে, এভাবে এটি ইক্যুইটি মূল্যের পতন ঘটলে আপনাকে আর্থিক নিরাপত্তা দেয়, ২০০৮ সালে আর্থিক সংকটের সময় এক বছরের মধ্যে সোনার মূল্য ৪৮% বৃদ্ধি পেয়েছিল, যদিও শেয়ার সূচক পড়েছিল ৫৬ শতাংশ।
স্থায়ী-উপার্জন বিনিয়োগে সুদের হার হ্রাস: অতিমারির জেরে জনপ্রিয় স্থায়ী-উপার্জন বিনিয়োগগুলির সুদের হারে তীব্র পতন ঘটেছে। ১৯৮৬-২০০০ সালের মধ্যে পিপিএফ-এর সুদের হার ছিল ১২%, কিন্তু সেটা এখন অনেকটাই কমে হয়েছে ৭.১%। এর জেরে আপনার অবসর পরিকল্পনায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে লাভজনক হিসেবে সোনার গুরুত্ব অনেকটাই বেড়েছে।
লিকুইডিটি: ভারতে বিবিধ পণ্য বিনিময়ে প্রতিদিন ৬১ বিলিয়ন টাকার সোনা লেনদেন হয়। এটি একটি লিকুইড সম্পদ যা সহজেই লেনদেন বা বিক্রি করা যায়। তাই অবসরের পর আপনার সম্পদের মধ্যে ধাতু বা ডিজিটাল আকারে কিছু পরিমাণ সোনা থাকলে, তা আর্থিক সংকটে কাজে লাগতে পারে। আপাতকালীন পরিস্থিতি দেখা দিলে এটি আপনাকে সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে।
পৈতৃক সম্পত্তি ও উপহার: আপনার অবসরকালীন তহবিলের পরিমাণ যদি যথেষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে তার কিছুটা অংশ আপনি উত্তরাধিকারীদের দেওয়ার কথা ভাবতে পারেন। সোনা (ধাতব আকারে) উত্তরাধিকারীদের দিলে তার উপর কর দিতে হয় না, এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সোনা এক গুরুত্বপূর্ণ পৈতৃক সম্পত্তি যা আপনি আপনার পরিবারের জন্য রেখে যেতে পারেন।
এছাড়া, আপনার কাছে হস্তান্তর যোগ্য যথেষ্ট পরিমাণে সোনা থাকলে আপনি প্রিয়জনদের সোনা উপহার দিকে পারেন। এর জেরে তাঁরা যে শুধুমাত্র উত্তরাধিকার সূত্রে সোনা লাভ করবে তাই নয়, পাশাপাশি সোনায় বিনিয়োগের সংস্কৃতিও রপ্ত করবে। অবসরের পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে তরুণ বয়স থেকেই সঞ্চয় শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনাকে বিনিয়োগের লাভ ঘরে তোলার ক্ষেত্রে এবং চক্রবৃদ্ধি সুদের হারে অবসরকালীন সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে অনেকটাই সময় দেয়। আপনার বিনিয়োগের মেয়াদ ও মুনাফার হার আপনার অবসরকালীন সম্পদের বৃদ্ধির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগ যদি সেভাবে করা যায় যা মুদ্রাস্ফীতিকে ঠেকাতে সক্ষম এবং দীর্ঘ মেয়াদে নির্ভরযোগ্য, তাহলে আপনি অবসর নেওয়ার পরেও জীবনযাত্রার মান আগের মতোই বজায় রাখতে পারবেন। সঞ্চয়ে সোনা রাখলে আপনি অবসর পরিকল্পনায় যে লক্ষ্য স্থির করেছিলেন, তা পূরণে সক্ষম হবেন।