Published: 20 ফেব্রু 2018
দৃঢ়ভাবে প্রদীপ্ত: সোনার গহনা এবং একুশ শতকের ভারতীয় প্রজন্ম
রিচা সিং, বয়স 30, একজন পুনেতে থাকা শিক্ষাবিদ, ‘বিনিয়োগ’ শব্দটির ব্যবহার নিয়ে তর্ক শুরু করে যখন সেটি সোনা কেনার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তার কাছে, গহনা হল এমন কিছু যা আপনি পরিধানের জন্য কেনেন, এমন কিছু নয় যা সিন্দুকে অথবা আলমারিতে লুকিয়ে রাখার জন্য কেনা হয়। তার মতে, “আমি কোন ভারি গহনার সেটের দিকে যাই না। সেদিকে একদম না-না”। সে কিন্তু একা নয়। এই বছরের প্রথম দিকে একটি প্রকাশিত প্রতিবেদন নিশ্চিত করে যে সারা দেশের দোকানদাররা দৃঢ়ভাবে নতুন প্রজন্মের ভারতীয়দের স্বাদের সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, বিশেষত শহরের অনুর্ধ্ব 30-এর কর্মরত মহিলাদের রুচি। যেভাবেই আপনি ভাঙুন না কেন, এই জনতাত্ত্বিক দর্শন তাদের মায়েদের মত সোনার গহনাকে দেখেনা। কিছু দশক আগে পর্যন্ত, মহিলারা সোনার গহনা আর্থিক নিরাপত্তার সাথে নান্দনিক মূল্যের জন্যও কিনত। আজকের শহুরে মহিলা সোনাকে তার ব্যক্তিগত অভিরুচির একটি পরিব্যপ্তি হিসাবে দেখে। “আমি সোনা পরি যদি সেটি যথোচিত এবং মার্জিত হয়,” বলছেন মিডিয়ার ব্যক্তিত্ব 29 বছরের রম্যা ফিলিপ্স। মুম্বাইয়ের একজন পডকাস্ট প্রযোজক 28 বছরের সরন্যা সুব্রামনিয়ানের কাছে কিছু গহনা আছে যেগুলি উপহারস্বরূপ পাওয়া তবে সেও কেনাকাটার কথা উঠলে রম্যার মতই খুঁতখুঁতে।
তবে যদি অবিবাহিত মহিলাদের হালকা গহনার প্রতি নজর থাকে, সেক্ষেত্রে যারা বলবে ‘আমি রাজি’ তারা ভিন্ন শ্রেণীর ক্রেতা। অঞ্চল এবং ধর্ম জুড়ে সোনা কেনাটা বিলাসবহুল ভারতীয় বিয়েগুলিতে একটি বড়-টিকিটের কেনাকাটা। যখন পুনের এক আর্কিটেক শিবানী সতপতি ওবরয় 2013 সালে তার বিয়ের পরিকল্পনা করছিল তখন সে অনেক দোকানদারে কাছে নিজের যোগাযোগের তথ্য দিয়ে এসেছিল আর তারপর ফিরে তাকাতে হয়নি। সে বলছে, “যখন তাদের বিশেষ ডিসকাউন্ট অথবা উৎসবের অফার চলত তখনই আমি টেক্সট মেসেজ পেতাম আর তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমার পছন্দের অথবা আমি পরতে চাইছি এমন গহনা কেনা এই সময়ই লাভজনক”। সে মেনে নিয়েছে যে বিবাহিত জীবনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার একটা অংশ হল এটা মেনে নেওয়া “কখনও কখনও তোমাকে প্রথাগত সোনার গহনা পরতে হবে বিশেষত ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক অথবা পারিবারিক অনুষ্ঠানে এবং সাথে সদৃশ কিছু পোশাকও পরতে হবে।” হতে পারে সোনার ওপর ভারতীয় অভিজাতদের আরোপ করা ভাবনাগুলিকে নিয়ে আরও অনেক কিছু করার সম্ভাবনা আছে। এটি একটি সমৃদ্ধির প্রতীক এবং সামাজিক স্থিতির হিসাবে দৃশ্যমান এবং সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত যে মহিলারা সোনা পরে তারা পরিবারের অবস্থানের পরিচায়ক হয়ে ওঠে। অবিবাহিত মহিলার ‘মুক্তি’ পেতে পারে হালকা আভরণে দিয়ে। বিবাহিত মহিলা হিসাবে, একজন সুশোভিত কণ্ঠহারই পছন্দ করবে।
মজার বিষয় হল যে শিবানী নিজেকে এমন একজন হিসাবে দেখছে যে কেনার থেকে বেশি অদলবদল করেছে। তার একটা ঘটনা মনে পরল যেখানে তার মা তার জন্য একটা নেকলেস কিনে এনেছিল এবং তাকে উপহার হিসাবে দিয়েছিল। “আমি জহুরির কাছে গেলাম আর আমরা সত্যিই পছন্দ এমন একটা গয়নার সাথে ওটা পাল্টে নিলাম”। এখানে কোন খারাপ অনুভূতি নেই। মুখে হাসি নিয়ে সে বলছে, “আমি মাকে নতুন নেকলেসটা দেখিয়েছিলাম আর বলেছিলাম যে আমি এটা ওর উপহার হিসাবে দেখতে চাই। উপহারের সেন্টিমেন্ট একই রইল।” প্রজন্ম জুড়ে রুচি পরিবর্তন হতে পারে তবে সোনার প্রতি (এবং উপহার) ভালোবাসা কোথাও যাচ্ছে না।