Published: 12 সেপ্টে 2017
পরজন্মে সোনা
গ্রীক পুরান নরকের খেয়ামাঝি চারোনের গল্প শোনায়, যে মৃত মানুষের আত্মা নদী বেয়ে নিয়ে যেত, এই নদী জীবিতের দুনিয়া থেকে মৃত দুনিয়াকে আলাদা করে রাখে। এই পথ অতিক্রমের জন্য চারোনকে প্রাচীন গ্রীকরা একটি কয়েন দিত, যেটি প্রায়সই সোনার তৈরি হত, এই কয়েনটি মৃতের মুখের মধ্যে দেওয়া থাকত।
প্রায় 6,000 কিমি দূরে, নিগূঢ় বিশ্বাস ও পবিত্র দেবী-দেবতায় ভরা জমিতে, ভারতীয়রা মৃতের মুখে সোনা দেওয়ার পিছনে একটি আলাদা কারণ অনুসরণ করে। এখানেও, সোনা কবচ হিসাবে বিবেচিত, যা অমঙ্গল, বিপদ এবং রোগ থেকে রক্ষা করে।
বিশেষত উত্তর এবং পশ্চিম ভারতে, যেখানে মৃতের মুখে সোনা রাখার রীতিটি বিস্তৃত পরিসরে প্রচলিত, সেখানে সোনা দৃঢ় প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতা আছে বলে বিবেচিত হয়। উইলিয়াম ক্রুকের উত্তর ভারতের জনপ্রিয় ধর্ম ও লোককথা (The Popular Religion and Folk-Lore of Northern India) বইটি অনুসারে, এই ধারণাটি এই মূল্যবান ধাতুর অভাব এবং মূল্য এবং এর রঙের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যে রং সম্পর্কে বলা হয় সা অশুভ শক্তিকে দূরে সরিয়ে দেয়।
কিংবদন্তি আছে যে এই মূল্যবান ধাতুটি বিশেষ করে মৃতের চারপাশে অশুভ শক্তির প্রতিসংহারে ফলপ্রসূ যখন এটি অলঙ্কারের আকারে থাকে এবং বিশেষত সেই সময় যখন তাতে ভগবানের চিত্র থাকে, মৃতের পরিবারের জন্য কিছু রহস্যময় তাৎপর্য থাকে বা কোন পবিত্র পাতা, ফুল বা পশুর অনুকরণে তৈরি হয়।
ক্রুকের মতে, মধ্যভারতের খান্ডেশের লোকেরা, মৃত পুরুষের মুখে সোনার পুঁতি দেওয়া পান পাতা দেয়, এই পুঁতি তার স্ত্রীর নেকলেস থেকে নেওয়া হয়। এই সোনার পুঁতি শবকে দেহ থেকে মুক্তি দেওয়ার সময় রক্ষা করে এবং ঈশ্বরের কাছে যেতে সক্ষম করে। এই মরনোত্তর আচারটি অন্তিম সংস্কার হিসাবে বিবেচিত হয় এবং মৃতের আত্মা যাতে পৃথিবীর এলাকায় (ভূলোক)বা মৃত এলাকায় (মর্তলোক) আটকে না থাকে তা নিশ্চিত করে। আদর্শগতভাবে, হিন্দু জনজাগ্রুতি সমিতি অনুযায়ী, সোনা মুখের ওপর রাখতে তা আত্মাকে ইতিবাচক গতিশীলতা অর্জন করতে এবং উচ্চতর মণ্ডলে যেতে সাহায্য করে। একইসাথে, সোনা নেতিবাচক শক্তিগুলির বশবর্তী হওয়ার সম্ভাবনা কমায় এবং অসম্ভাব্য রূপে মৃতের আত্মার দ্বারা তার পরিবারের পীড়নের সম্ভাবনা কমায়।
একইভাবে, পাঞ্জাবে, একটি সাধারণ প্রচলন হল সোনা সমেত পঞ্চরত্ন মৃতের মুখে দেওয়া।
যদিও সোনার আকার ও ধরণ ভূভাগ, ধর্ম এবং সম্প্রদায় ভেদে আলাদা হয়, তবে এই বিশ্বাস সাধারণ যে সোনা আত্মা ও দেহকে পরিষ্কার ও শুদ্ধ করে যখন সেটি পৃথিবীর সীমা অতিক্রম করে।