Published: 17 আগ 2017
ঐতিহ্যমন্ডিত ভারতীয় শাড়িগুলিতে সোনার ব্যবহার
আপনি কি জানেন যে 2800 খ্রীস্টপূর্বাব্দ থেকে শাড়ির অস্তিত্ব আছে1?
বর্তমানে, অনেক ভারতীয় রাজ্য এবং সংস্কৃতির নিজস্ব ধরণের শাড়ি আছে, এবং একটি শাড়ি পরিধান করার 84 টি উপায় প্রমাণ করার জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আছে!2। এই শাড়িগুলি সূতি, সিল্ক, শিফন, ইত্যাদি বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি।
কিন্তু এখানেই সর্বোত্তম অংশ: এমনকি অনেক শাড়ি সোনা থেকে তৈরি হয়।
দেশের বিভিন্ন অংশে মূল্যবান সোনা দিয়ে তৈরি অনেক ধরণের শাড়ি আমরা এখানে একবার দেখে নেব।
-
উত্তরপ্রদেশের বেনারসি সিল্ক শাড়ি
এই শাড়িগুলি বারাণসী (আগে বলা হত বেনারস বা বানারস) তে তৈরি হত। এই অভুতপূর্ব শাড়িগুলি তাদের সোনার জড়ির এবং অসাধারণ এমব্রয়ডারির জন্য সুপ্রসিদ্ধ। শাড়িগুলি সাধারণত সিল্কের হয়ে থাকে এবং এর অসাধারণ ডিজাইনগুলি এটিকে বিয়ের কনেদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে। সেগুলিতে থাকে ব্যাপক সোনার কাজ, ধাতব প্রভাব, নেট প্যাটার্ন, এবং মিনাকারী কাজ।
বেনারসি শাড়ি সাধারণত ফুলের নক্সা, লম্বা ধরণের পাতা এবং ছোট এবং বিশদ চেহারার মত মুঘল আমলের ডিজাইনের বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয়ে থাকে।
-
তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরম সিল্ক শাড়ি
কাঞ্জিভরম শাড়িও বলা হয়ে থাকে, এই শাড়িগুলি কাঞ্চি বা কাঞ্চিপুরম শহরে তৈরি। এই শাড়িগুলি বিশুদ্ধ মালবেরী সিল্কের সূতো দিয়ে তৈরি। জড়ি, যা সোনার সূতো দিয়ে তৈরি, যেটি কাঞ্জিভরম শাড়িগুলির মুখ্য বৈশিষ্ট্য। এটিতে সাধারণত চওড়া বিসদৃশ পাড় থাকে এবং ঐতিহ্যমন্ডিত ডিজাইন, যেমন চেক, স্ট্রাইপ, ফুলের নক্সা, পাখি, জীবজন্তু বা মন্দিরের ছবিযুক্ত পাড় থাকে। এটিতে দক্ষিন ভারতের মন্দির, রামায়ন বা মহাভারতের মত পুরাণের চিত্র, এবং রাজা রবি ভার্মার আঁকা ছবি থাকতে পারে। কখনও কখনও, এই নক্সাগুলি সোনার সূতো ব্যবহার করেও বোনা হইয়ে থাকতে পারে।
মজার বিষয়:পৃথিবীর সর্বাধিক ব্যয়বহুল শাড়িটি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্বীকৃত হয়েছে এবং এটি শেষে পরিধান করেছিলেন নীতা আম্বানি, এর ওজন ছিল 8 কেজি এবং এটিতে রাজা রবি ভার্মার 11 টি বিখ্যাত হাতে আঁকা ছবি ছিল। এটির মূল্য ছিল আনুমানিক 40 লক্ষ টাকা।
-
কেরালার কাভাসু
মুন্ডাম নেরিয়াথুম নামে অভিহিত এটিকে শাড়ির প্রাচীনতম সংস্করণ বলা হয়ে থাকে। মহাভারতে, শকুন্তলা 'নিভি' স্টাইলে এই শাড়িটি পরিধান করেছিল বলে মনে করা হয়ে থাকে! এটি শিল্পী রাজা রবি ভার্মার হাতে আঁকা ছবির নক্সার জন্যও সুপ্রসিদ্ধ।
কাভাসু শাড়ি সূতীর হয়ে থাকে এবং হাতে বোনা হয়। এই ধরণের শাড়িতে খাঁটি সোনার তৈরি চওড়া জড়ির পাড় থাকে। এটিতে সাধারণ সরল জ্যামিতিক ডিজাইন থাকে, কিন্তু কখনও কখনও ময়ূর বা মন্দিরের ডিজাইনও থাকতে পারে।
-
মহারাষ্ট্রের পাইথানি
ঔরঙ্গাবাদের, পৈথানের সূক্ষ সিল্ক এবং খাঁটি সোনার জড়ি দিয়ে তৈরি, এই শাড়িটিকে দেশের সর্বাধিক ব্যয়বহুল শাড়ি বলা হয়ে থাকে। একটি বর্গক্ষেত্রের মধ্যে, দাগ দাগ বা সরল সীমানা থাকে এবং এর আঁচলে একতি ময়ূর বা টিয়াপাখির নক্সা - শাড়িটির খোলা অংশটি কাধের ওপর ফেলা থাকে।
এই শাড়িগুলি বৌদ্ধ চিত্রকলা দ্বারা প্রভাবিত এবং এতে থাকে প্রতিক যা বৌদ্ধ সংস্কৃতিতে জনপ্রিয়। কখনও কখনও, আঁচলে ফুলগাছ সমেত ফুলদানি, ফুলের নক্সা, মই বা জ্যামিতিক ডিজাইনও থাকতে পারে।
মজার বিষয়:এই শাড়িগুলিতে ব্যবহৃত সোনার সূতো সূক্ষ এবং নিখুঁত গুণমানের। এটি শাড়িটিকে অত্যন্ত প্রতিফলনযোগ্য করে তোলে এবং কখনও কখনও একটি আয়না বলে ভ্রম হয়!
-
আসামের মুগা
এই শাড়ি মুগা দিয়ে তৈরি, যা 'সোনার তন্তু' নামে পরিচিত। এটি সাধারণত কোনও নক্সা ছাড়া হয়, কিন্তু কখনও কখনও বুটি বা পয়সার নক্সা করা থাকে। এটিতে ফুল, পাতা,পল্লব, জ্যামিতিক আকার বা হাতির নক্সার স্বকীয় এবং সূক্ষ্ম এমব্রয়ডারিও করা থাকতে পারে। এই চকমকে শাড়ির উপরিভাগ উজ্জ্বল হয়, যা প্রত্যেকবার ধোওয়ার পর আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে!
মজার বিষয়:আগেকার দিনে মুগা শাড়িগুলি রাজমর্যাদার জন্য সংরক্ষিত থাকত।
-
বাংলার বালুচরি
বালুচরি শাড়ি সিল্ক দিয়ে তৈরি এবং আঁচলে পৌরাণিক দৃশ্যগুলি চিত্রিত থাকে। সেগুলিতে মহাভারত এবং রামায়নের দৃশ্যগুলি চিত্রিত থাকে। মুঘল আমলে, এটিতে বর্গক্ষেত্র, উজ্জ্বল রঙে আঁকাবাঁকা নক্সা/বুটির নক্সা এবং বাংলার নবাবদের জীবনী প্রদর্শিত হত। ব্রিটিশ আমলে, এমনকি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ইউরোপীয় অফিসারদের ছবিও মাঝে মধ্যে বোনা হত!
ইতিহাস অনুযায়ী, জমিদার বাড়ির উচ্চ সম্প্রদায়ের মহিলারা এই শাড়িগুলি পরিধান করতেন। বালুচরি একটি ধরণ আছে যেটিকে বলা হয় স্বর্ণচুড়ি, যা সোনার সূতো দিয়ে বোনা হয়ে থাকে। সোনা শাড়ির নক্সাটিকে আরও ফুটিয়ে তোলে যার ফলে এর সৌন্দর্য্য আরও বৃদ্ধি পায়।
মজার বিষয়:এই ধরণের শাড়ি বোনার জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতি 2009 এবং 2010 সালে জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত করেছেন।