Published: 20 ফেব্রু 2018
রাজা দুষ্মন্তের সোনার আংটি
“একটি আংটি তাদের সবাইকে শাসন করে, একটি আংটি তাদের সবাইকে খোঁজে, একটি আংটি তাদের সবাইকে কাছে আনে আর অন্ধকারে তাদের আবদ্ধ করে৷” এই উদ্ধৃতিটি টোকিয়েনের যেকোন অনুরাগীই জানে৷ কিন্তু এখানে ভারতে, আংটির আরেক আক্ষান আছে যেটি দুই প্রেমিককে পুনরায় মিলিত করে৷
কোন এককালে শকুন্তলা নামে এক অপরূপা সুন্দরী তরুণী ছিল, যে ঋষি কাহ্নর দত্তক কন্যা এবং ঋষিরই আশ্রমের অরণ্যে থাকত৷ একদিন, হস্তিনাপুরের রাজা দুষ্মন্ত শিকার করছিল এবং শকুন্তলার হরিণকে তীর নিক্ষেপ করেন৷ সে দেখে তার হরিণটি যন্ত্রণায় কাঁদছে, তাই সে তাকে আরাম দেওয়ার চেষ্টা করে৷ পশুর প্রতি তার স্নেহ দুষ্মন্তের মন ছুঁয়ে যায় এবং তিনি তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে৷ সে তাঁকে ক্ষমা করে এবং সেই হরিণের ক্ষত পরিচর্যা করার জন্য তার সাথে থেকে যেতে বলে৷
সময়ের সাথে, তারা প্রেমে পরে এবং একে অপরকে বিবাহ করে৷ দুষ্মন্ত তাকে নিজের নাম লেখা একটি সোনার আংটি দেয় বিবাহের চিহ্নস্বরূপ এবং আবার ফিরে এসে নিজের সাথে শকুন্তলাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজ রাজ্যে ফিরে যায়৷
কিছু দিন পরে, ঋষি দুর্বাসা শকুন্তলার দ্বারে আসেন৷ তিনি বারবার জল তান কিন্তু দুষ্মন্তের চিন্তায় মগ্ন শকুন্তলা সেদিকে দৃকপাত করেনা৷ ঋষি অপমানিত বোধ করেন এবং তাকে অভিশাপ দেন- যে ব্যক্তির কথা সে চিন্তা করছে সেই ব্যক্তি তার কথা ভুলে যাবে৷
এই অভিশাপ শোনার পর, সে ক্ষমা ভিক্ষা করে৷ তার প্রার্থনা শুনে, তিনি বলেন তিনি তার অভিশাপ ফেরত নিতে পারবেন না কিন্তু তা পরিবর্তন করতে পারবেন৷ যদি দুষ্মন্তকে তাদের সম্পর্কের কোন প্রমাণ দেখানো যায়, তাহলে তিনি তাকে মনে করতে পারবেন৷
এই অভিশাপ সাথে নিয়ে, দুষ্মন্ত শকুন্তলার কথা ভুলে যান৷ শকুন্তলা রাজার রাজ্যে গিয়ে তার সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু তার যাওয়ার রাস্তায় নদী অতিক্রম করার সময়, তার বিয়ের সোনার আংটিটা জলে পরে যায়৷ একটি মাছ সেই সোনার আংটিটা গিলে ফেলে৷ যখন শকুন্তলা প্রাসাদে পৌঁছায়, রাজা তাকে চিনতে পারেনা৷
লজ্জায়, সে অরণ্যের আরেক অংশে একটা জীবন কাটাতে থাকে যেখা্নে সে ভরত নামে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেয়৷ ভরত ছিল একজন বীর পুত্র যে অরণ্যের জীবজন্তুদের মাঝে বড় হতে থাকে৷
একদিন এক মৎসজীবী একটি সোনার আংটি না নিয়ে আসা পর্যন্ত অনেক বছর দুষ্মন্ত শকুন্তলার কথা মনে করতে পারেনি৷ সে রাজাকে বলে যে সে আংটিটা একটি মাছের পেটে পেয়েছে এবং সোজা তাঁর কাছে নিয়ে এসেছে৷ সেই সোনার আংটিটাকে একবার দেখেই অভিশাপ শেষ হয়৷ রাজা শকুন্তলার কথা মনে করতে পারেন এবং সোজা তার বাড়িতে ধাবিত হন কিন্তু তাকে খুঁজে পাননা৷ হতাশ হয়ে, তিনি নিজের প্রাসাদে ফিরে আসেন৷
আরও কিছু বছর চলে যায়৷ রাজা অরণ্যে শিকারে যায় এবং একটি বালককে দেখে আশ্চর্য হন যে সিংহ শাবকের সাথে খেলছিল৷ বালকটি শাবকের মুখ খুলে বলেছিল, “আরে জঙ্গলের রাজা! তোমার মুখটা পুরো খোলো, তাহলেই তো আমি তোমার দাঁত গুণতে পারব৷”
এটি দুষ্মন্তকে মুগ্ধ করে এবং তিনি বালককে জিজ্ঞাসা করেন তার মাতা-পিতা কে৷ ছোট বালকটি উত্তরে বলে যে সে রাজা দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার পুত্র৷ অবিলম্বে তিনি সেই বালকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যেতে বলেন৷
পরিবার একত্রিত হয় এবং ভরত বড় হয়ে এক মহান রাজা হয়৷