Published: 04 সেপ্টে 2017
থেওয়ার ইতিহাস
ভারতের গহনার ইতিহাস তার সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রসঙ্গের সাথে সংযুক্ত; আপনি দেশে উৎপাদিত গহনার সম্পর্কে দেশের ইতিহাসে খোঁজ করতে পারেন। 5000 বছর ধরে, ভারতীয় গহনা ভারতের সংস্কৃতি প্রকাশ করে চলেছে এবং এর নান্দনিক মূল্য বর্ণনা করেছে মানুষকে, তাদের জীবনযাত্রা এবং তাদের রাজত্বকে, যা তারা সোনা দিয়ে খোদাই করে সংরক্ষিত করে রেখেছিল। এই কাম্য টুকরোগুলি তৈরির বিভিন্ন পদ্ধতি এবং তার সাথে বিভিন্ন চারুকলার মিশ্রণ, এক নিখুঁত ডিজাইন তৈরি করতে সাহায্য করে, সূক্ষ্ম কাজের পৃষ্ঠপোষকতা কেবল শাসক বা রাজ পরিবারগুলিই করত না সাথে বিদেশীরাও করত। যথা সময়ে, স্থানীয় সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রা দ্বারা প্রভাবিত এই ডিজাইনগুলির বিন্যাস. বিদেশেও ছড়িয়ে পরে। এটি শিল্পের খ্যাতি নিয়ে আসে, কখন আবার যে এই অনন্য শিল্পের নিদর্শনটি তৈরি করেছে সেই শিল্পের প্রস্তুতকারক শিল্পীকেও যশস্বী করে তোলে।
একটি শিল্প হিসাবে থেওয়া 400 বছর আগে থেকে পাওয়া যায় যখন প্রতাপগড়ের শাসকরা একটি জমি সেই সমস্ত শিল্পীদের পরিবারদের জন্য মঞ্জুর করে যারা এই শিল্প নিয়ে কাজ করত। এটা বিশ্বাস ছিল যে গহনা-তৈরির ধরণ হিসাবে যদিও এটি অনেক আগে থেকেই ছিল এবং বাঙালি শিল্পীদের বছরের আগেই কাজ শুরু হয়েছিল, তবে তাদের চাহিদা মত পৃষ্ঠপোশকতা না পাওয়ায় তার দাতার খোঁজে পশ্চিমাভিমুখি হয়। রাজস্থানে এসে স্থায়ী হয়ে তাদের অন্বেষণ শেষ হয়। তারা কিছু স্থানীয় অদ্ভুত শিল্পের ধরণ শিখেছিল আর তারপরের ঘটনাটা তারা যেমন বলে ‘বাকিটা পুরোটাই ইতিহাস’। যথা সময় থেওয়া একটি পারিবারিক ব্যবসা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটির অনুশীলনকারীদের দ্বারা ভীষণভাবে রক্ষিত হয়। মহিলাদের এটি কখনই শেখানো হয়নি কারণ তাদের অন্য পরিবারে বিয়ে হয়ে যায় এবং, কেবলমাত্র তাদের শ্বশুরবাড়ির সাথে সেটি ভাগ করা হয় তাহলেও অন্যরা এই শিল্পকলাটি জেনে যাবে!
অন্য অনেক প্রথা এবং শিল্পকলাই যেমন যত্ন আর হিতৈষি দাতার অভাবে শুষ্ক হয়ে যায়, থেওয়াও তেমনই অবক্ষয় দেখে অন্তত আধুনিক যুগ পর্যন্ত, এই সময় এসে ভারতীয় ডিজাইনাররা এই অপূর্ব চারুকলাটিকে তার পুরনো গৌরব ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিজেরা গ্রহণ করে। থেওয়ার সাথে এক নিঃশ্বাসে প্রায়সই উচ্চারিত একটি নাম হল রূপা ভোহরা। ইনিই 1990-এর দশক থেকে এই চারুকলার আসল পুনরারম্ভ শুরু করেন এবং আজকের জনপ্রিয়তার নেতৃত্বে নিয়ে আসেন।
থেওয়া গহনায় কাঁচ ও সোনার অনন্য মিশ্রণ পাওয়া যায়। এই মাস্টারপিসগুলি তৈরির জন্য খোদাই করা ফিলিগ্রি করা সোনার পাত কাঁচের ওপর সংযুক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে ধৈর্যশীল পরিচালন এবং প্রকৌশলের নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন, যেহেতু সোনার পাতগুলি চূড়ান্ত বিশুদ্ধতার সাথে ব্যবহৃত হয়। রূপার সুবিবেচনাপূর্ণ এবং অত্যন্ত ধৈর্যশীল প্রচেষ্টা আজ থেওয়াকে প্রায় এক অনন্য পরিচিতি দিয়েছে! বিভিন্ন ডিজাইনের পরিসরের অন্তর্ভুক্ত মুঘলদের আদালতের দৃশ্য, হিন্দু পুরান কথা, ফুলের প্রসঙ্গ, ঐতিহাসিক দৃশ্য, হরিণ, হাতির মত পশু, পরী এবং আরও অনেক ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা অনেক দৃশ্য। থেওয়া গহনার ধরণ ভারতের রাজাধিকার এবং সমৃদ্ধশীল যুগে নিয়ে যায়।
এটি অপূর্ব সুন্দক নেকপিস, কানের দুল, ব্রোচ, আংটি, মাঙ্গ টিকা বা টিকলির সাথে বয়স্ক এবং তরুণ উভয় প্রজন্মের আনুকুল্য পেয়েছে, যেগুলি সাশ্রয়ী মূল্য থেকে শুরু করে অত্যন্ত দামি মূল্যের বিস্তৃত পরিসরে পাওয়া যায়। আধুনিক প্রজন্মের কাছে থেওয়া প্রীতিকর হয়ে ওঠার আরেকটি কারণ হল এটি একাধিক চমৎকার রং ও ডিজাইনের বিন্যাসে উপলব্ধ। কাছ থেকে দেখলে বোঝা যায়, প্রতিটি থেওয়া গহনায় শিল্পী এমন এক ক্যানভাসের ওপর তার দৃষ্টিভঙ্গীতে সাজিয়ে তুলেছে, যে ক্যানভাসটি সোনায় তৈরি।