Published: 10 সেপ্টে 2018
যখন শেয়ার বাজার পড়ে যায় তখন সোনার ক্ষেত্রে কেমন প্রতিক্রিয়া হয়
এটি একটি সাধারণ ভ্রান্ত ধারণা যে শেয়ার বাজার পড়ে গেলে সোনার দামও পড়ে যায়| কিন্তু বাস্তবতাটি ঠিক এর বিপরীত| অনেক লগ্নিকারকই সোনাকে বাজারের অনিশ্চয়তার প্রধান প্রতিবন্ধক এবং পোর্টফোলিও বিকশিত করার একটি পন্থা হিসাবে দেখেন|
যখন শেয়ার বাজার পড়ে যায় তখন সোনা, শেয়ারের চেয়ে যে ভালো অবস্থায় থাকে তার স্বাক্ষ ইতিহাসে আছে|
স্বর্ণ বনাম নিফটি
2008-09 অর্থনৈতিক বর্ষে যখন সেনসেক্স প্রায় 38% হ্রাস পায় তখন সোনা থেকেই একমাত্র 24.58% রিটার্ন পাওয়া সম্ভব হয়েছিল| একইরকম ভাবে 2012-13-তে যখন নিফটি সমতল হয়ে পড়েছিল বা পতনের সম্মুখে ছিল তখনও ভারতে সোনার দাম দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল|
যদি সারণিটিকে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যায় তাহলে দেখতে পাওয়া যাবে বিগত দশকে সোনা কিভাবে নিফটির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছে|
Source
স্বর্ণ বনাম এস.এন্ড পি.500
যদি আমরা 1976 সাল থেকে সবচেয়ে খারাপ বাজারের অবস্থার সময় সোনা ও এস এন্ড পি.500-এর মধ্যে প্রদর্শনগত প্রতিতুলনা করি, তবে দেখা যায় যে গত 40 বছরে এস এন্ড পি 500-এর 8 টি বৃহত্তম পতনের মধ্যে 7 টির ক্ষেত্রেই সোনার দাম শেয়ার বাজার সূচকের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
2008 সালের আর্থিক সংকটের প্রাথমিক ধাক্কায় সোনার দাম কমে গেলেও বছরের শেষ প্রান্তে তা 5.5% বৃদ্ধি পায় যদিও এস এন্ড পি-র ধারাবাহিক পতন অব্যাহত থাকে| শেয়ার বাজার বিক্রির মোট 18 মাস ব্যাপী পর্বের মধ্যে সোনার দাম 25%-এর বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল|
আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো বুল মার্কেটের ঠিক পরেই সোনার একমাত্র উল্লেখযোগ্য বিক্রি (১৯৮০ সালের প্রথম দিকে -46%) কমে যায় | 1970 সালে সোনার মূল্যের যে সর্বনিম্ন সীমা ছিল তা এক দশক পরেই 2300% বৃদ্ধি পায়|
সামগ্রিকভাবে ইতিহাস থেকে এই তথ্যই মেলে যে শেয়ার বাজারের পতনের সময় সাধারণ মানুষ সোনার অস্বাভাবিক মূল্য হ্রাস যতটা হবে ভেবেছিল, তার চেয়ে অনেক কমই হয়| যেখানে শেয়ারের লাভবান হওয়ার সহায়ক অর্থনৈতিক উন্নতি ও স্থিতি, সেখানে অর্থনৈতিক অস্থিরতার ও অনিশ্চয়তার কালেও সোনায় লাভবান হওয়া গেছে| যখন শেয়ার বাজারের পতন হয় তখন স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্ক বৃদ্ধি পায় এবং লগ্নিকারীরা একটি সুরক্ষিত ঠিকানা খোঁজে | আর সেই সময় সোনাই হতে পারে সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আশ্রয়|
2018 সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেয়ার বাজারের পতন
2018 সালের 5 ফেব্রুয়ারি, সোমবার; এই দিনটিকে বলা হয় 'ভোলমাগেডন' (ভলিউম আর্মাগেডন)| ওই দিন এস এন্ড পি 500 এর 113.13% পতন ঘটে। ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে এটি ছিল একদিনকার পয়েন্ট পতনের নিরিখে সর্বোচ্চ| কিন্তু বিক্রি বন্ধ হওয়ার 24 ঘন্টার মধ্যেই সবমিলিয়ে 124.21 পয়েন্টের পতন ঘটে| তখন পুঁজি দ্রুত গতিতে বিট কয়েনের দিকে ঝোঁকে ও বিট কয়েন উল্লেখ্যযোগ্য ভাবে 6000 ডলার লক্ষ্যবিন্দু স্পর্শ করে|
6 ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যের শুরুতেই বি.এস.ই. সেনসেক্সের 1200 পয়েন্ট পতন ঘটে এবং এন.এস.ই. নিফটি 168 পয়েন্ট হারিয়ে দিনের শেষে 10,498 পয়েন্টে বন্ধ হয়|
প্রাথমিক পর্যায়ে সোনার বিক্রি বন্ধ অবস্থায় সোনার দামের খুব একটা হেরফের হয়নি কিন্তু শেয়ার মূল্য যত পড়তে থাকে সোনার মূল্যও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, এমনকি স্বল্পকালীন তহবিলের ক্ষেত্রেও সোনা ভালো ফল দেয়| শেয়ার বাজারের এমত পশ্চাৎগামীতা ছিল অত্যন্ত প্রখর কিন্তু স্বল্পকালীন| দাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়ালের গড় পতন 4.6 % হলেও 6 ফেব্রুয়ারি দিনের প্রথম দিকে এশিয়ার শেয়ারের উন্নতি হয় এবং বিশ্বজনীন শেয়ার বাজার ধীরে ধীরে তার হারানো জমি ফিরে পেতে থাকে| শেয়ারের উচ্চ প্রবণতা শুরু হওয়ার পূর্বেই 8 ও 9 ফেব্রুয়ারি পুনরায় বাজারে পতন ঘটে | 12 ফেব্রুয়ারি সোমবার, দাউ জোন্স তার সর্বোচ্চ সাপ্তাহিক ক্ষতির প্রায় অর্ধেক পুরুদ্ধার করতে সক্ষম হয় এবং ইউরোপীয় শেয়ারের 30 %-এর কাছাকাছি পুনর্গঠিত হয়| এই পুরো সময় জুড়েই এশিয়ার শেয়ার তাদের ক্ষতির ধারা বজায় রেখেছিল|
2 থেকে 12 ফেব্রুয়ারির মধ্যে সোনা 0.8% পতনের মধ্যে দিয়ে জমি হারাতে শুরু করলে একমাত্র তহবিলের ক্ষেত্রে তার ভালো অবস্থা বজায় ছিল| এর অর্থ ছিল এটি পোর্টফোলিওর ক্ষতি খর্ব করেছিল ও যখন বাজার পুনর্গঠিত হচ্ছিল তখন লগ্নিকারকদের মধ্যে সহজলভ্যতার সঞ্চার করে এবং পুরো সপ্তাহ জুড়ে ইউরোপীয় মুদ্রার ইউ.এস. ডলারের তুলনায় মূল্য হ্রাসের কারনে সোনার দাম ১০ দিনের মধ্যে ইউরোতে ০.৯ % ও স্টারলিংয়ে ১.৮ % পুনরুদ্ধার হয়|
সুশৃঙ্খল ঝুঁকির প্রতিবন্ধক হিসাবে সোনা
একটি সুরক্ষিত আশ্রয় হিসাবে সোনার ক্ষেত্রে সাধারণত গুনমানগত উত্তরণের ধারা থেকে সুবিধা লাভ হয়ে থাকে | সোনা ও শেয়ারের বৈপরীত্যমূলক সম্পর্কের অর্থ, বাজারে ব্যাপক সোনা সমাবেশের জোড়ালো অনুসন্ধান | ঐতিহাসিক প্রবণতা বজায় রেখেই সোনা ও শেয়ারের অন্তঃসম্পর্ক ৫ ফেব্রুয়ারি বিক্রি বন্ধ চলা কালীন, শেয়ার মূল্য পড়ে যাওয়ায়, উত্তরোত্তর আরও নেতিবাচক হয়ে ওঠে| এর ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে | যখনই বাজারের সংশোধন একাধিক ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করেছে অথবা কিছু সময় ধরে তার রেশ চলেছে তখনই সোনা তাতে এক সক্রিয় প্রতিবন্ধকের ভূমিকা পালন করেছে| 2001 সালে যখন ডট কম বাবল প্রকাশ্যে এসেছিল তখনও কিন্তু সোনার ক্ষেত্রে ঝুঁকি সেরকম ব্যাপক হয়নি| তবে যখন যখন ইউ.এস-এর অর্থনীতি বৃহত্তর বিশ্বমন্দায় পতিত হয়েছিল, সেই সময় সোনার দাম লক্ষণীয় ভাবে সাড়া দিয়েছিল| একই রকম ভাবে ইউরোপের বাইরের লগ্নিকারীরা 2015-তে ঘটা গ্রিস ডিফল্ট-এর কারণে বাড়তির সম্ভাবনা ছেড়ে দিয়েছিল|
বিনিয়োগকারীদের নিমিত্ত কৌশল
(নিম্নলিখিত পাঠটির সঙ্গে ছবি সংযুক্ত হবে)
সোনা যে-কোনো পোর্টফোলিয়ের ক্ষেত্রেই ক্ষেত্রেই 6 টি মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে :
- দীর্ঘকালীন রিটার্নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রদান
- বৈচিত্র্যপূর্ণ বিকল্প সরবরাহ করা
- উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন রিটার্নের মাধ্যমে পোর্টফোলিয়ের প্রদর্শন বাড়ানো যায়
- এটি ঐতিহাসিক ভাবেই নগদ ও মানি মার্কেট তহবিলের থেকে ভালো কাজ দেয়
- এমনকি রিয়েল এস্টেট মূল্যও সোনার মূল্যের অর্ধেকের চেয়ে একটু বেশি হয়ে থাকে
যখন বাজারের ওপর অনিশ্চয়তার চূড়ান্ত অভিঘাত নেমে আসে তখন যে-কোনো ঘটনাই ঘটতে পারে | কিন্তু সোনার একাধিক ভূমিকা পালনের পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারের খামখেয়ালি প্রদর্শনের কথা মাথায় রাখলে বলতেই হয় যে, যে-কোনো পোর্টফোলিওতে যথেষ্ট পরিমাণ সোনা মজুত রাখাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ|
প্রবন্ধ সূত্র:
গোল্ড.ওআরজি রিপোর্ট-মার্কেট সেল-অফ বোলসটারস : দ্য কেস অফ গোল্ড