Published: 04 অক্টো 2018
কিভাবে সোনার দামের ওপর মার্কিন ডলার প্রভাব বিস্তার করে?
আমাদের কাছে বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে সোনা একটি অন্যতম প্রাচীন উপকরণ এবং এটি দীর্ঘ সময় ধরে এটি মুদ্রার ভূমিকা পালন করেছে। অন্যান্য মুদ্রাগুলি এই ভূমিকাটি অধিগ্রহণ করলেও আধুনিক অর্থ এবং সোনার মধ্য স্থিত আন্তঃসম্পর্কটি হারিয়ে যায় নি।
সোনার মান্যতার বিপর্যয়ের পর, সোনা এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসার ক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির জন্য মার্কিন ডলার কার্যত বেঞ্চমার্ক হয়ে যায়। পরিণামে, এই দুটিই খুব কাছাকাছি সম্পর্কিত হয়। তাই, চলুন দেখে নিই কিভাবে মার্কিন ডলার সোনার মূল্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে।
সোনা এবং ডলার
সোনা একটি বহুমুখী সম্পদ এবং বিশ্বব্যাপী মুদ্রাগুলির সামগ্রিক মূল্য উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে এটির মূল্য সংবেদনশীল। ভূরাজনৈতিক দোলাচলের ভীতির সময়, সোনার দরের প্রবণতা হল উপরের দিকে ওঠা-এটি অনেকটাই হয়েছিল জুলাই মাসে মার্কিন-চীন ব্যবসায়িক উত্তেজনার সময়। যদিও, অগাস্টের পরেই, এই ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার ক্ষেত্রে 20-মাসের একটি নিম্নমুখী অবজ্ঞা দেখেছিল। আর এটির পিছনে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কারণটি ছিল মার্কিন ডলারের শক্তিবৃদ্ধি। কিন্তু এটাই প্রথমবার নয় যখন সোনার মূল্য কোন শক্তিশালী ডলার বা মার্কিন অর্থনীতির কারণে ওঠানামা করেছে।
ডলার আর সোনার মধ্যে সম্পর্কটা গুরুত্বপূর্ণ তবে এই ধাতুর দামের প্রভাব বিস্তার করার জন্য ডলারই একমাত্র কারণ নয়। যে দিন থেকে সোনা নিজের সুদ উৎপাদন করে না, সে দিন থেকে বিনিয়োগের চাহিদার জন্য এটি সুদ-সমর্থিত সম্পদগুলির সঙ্গে প্রতিযোগীতা শুরু করে। যখন সুদের হার বারে, সোনার দাম হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা থাকে, যেহেতু উচ্চতর রিটার্নের জন্য অন্যান্য সম্পদের চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং উচ্চতর সুদের উপকরণের কারণে এটি অর্জন করা যেতে পারে।
তাহলে কিভাবে সোনার মূল্যের ওপর মার্কিন ডলার প্রভাব বিস্তার করে?
চলুন বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে মার্কিন ডলার সোনার মূল্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। মার্কিন সরকারের কাছে প্রধান উৎপাদকের তকমাটি না থাকলেও সারা বিশ্বের সোনার একটা বড় অংশ রিসার্ভ করে রেখেছে। এটি মূলত আমদানি করে নিজের মজুদ বাড়িয়ে এই পদ ধরে রেখেছে।
যখন ডলার দুর্বল হয়ে পরে, সোনার আমদানি আরও ব্যয়বহুল হয়ে পরে। ফলত, কোম্পানিগুলিকে পণ্য ও পরিষেবা আমদানির জন্য বেশি ডলার প্রদান করতে হয়। বুলিয়ানের ডিলারের পাশাপাশি সরকারকেও সোনার জন্য বেশি অর্থ প্রদান করতে হয়। এর ফলস্বরূপ সোনার দাম বৃদ্ধি পায়। বিপরীতক্ষেত্রে, ডলার শক্তিশালী হওয়ার অর্থ হল সোনার মূল্য হ্রাস।
দুর্বলতর ডলার মার্কিন ঋণের বিদেশী হোল্ডারগুলির ওপরও প্রভাব ফেলে, যা মার্কিন ভান্ডার এবং অর্থনীতির বিশ্বাসের ভিত নাড়িয়ে দেয়। মার্কিন অর্থনীতিতে বিশ্বাস হারানোর ফলস্বরূপ সোনার মূল্য বৃদ্ধি পায়।
একইভাবে, মার্কিন ডলারের মূল্য হ্রাস মুদ্রাস্ফীতির ইঙ্গিতও কিছুটা দিয়ে থাকে। যখন কাগজী মুদ্রা হুমকির মধ্যে থাকে তখন সোনাকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে গড়ে তোলা সাধারণ মানুষের প্রবণতা। মুদ্রাস্ফীতির বৃদ্ধি সোনার দামের ক্ষেত্রে ভালো এবং মুদ্রাস্ফীতি-নিয়ন্ত্রিত সোনার মূল্য অত্যন্ত ইতিবাচক হয়ে উঠতে পারে যদি অর্থনীতির ওপর ভরসা সম্পূর্ণ ক্ষয় হয়ে যায়। 2008 সালের উপমুখ্য সংকটটি এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ। এই সময়, রিয়েল এস্টেট তলিয়ে গেছিল এবং অংশিদারিত্বের ক্ষেত্রে বড় মাপের বিক্রি বন্ধের পরিস্থিতিতে নিরাপদতম বাজি হিসাবে পরিগণিত হওয়ায় এক তৃতীয়াংশ সোনায় স্থানান্তরিত হয়েছিল। এমন কি, সেই সময় সংকটের ইতিবাচক প্রভাব সোনার মূল্যের ক্ষেত্রে পরেছিল বলে ঘোষিত হয়েছিল এবং ঐতিহাসিকভাবে প্রতি এক আউন্সে এই ধাতুটির দাম প্রায় $1,900 হয়েছিল।
সোনা এবং টাকা-ডলারের সমীকরণ
ভারতীয় গ্রাহকরা সোনাকে বিনিয়োগের সম্পত্তির পাশাপাশি একটি অলংকরণ হিসাবেও দেখে। ভারতীয় জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশের বেশি মানুষ, নিরাপদ বিনিয়োগের চাবিকাঠি হিসাবে সোনা কেনে, অন্যদিকে বাকিরা শুধুমাত্র অলংকরণের জন্য এই ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।
টাকা এবং ডলারের মধ্যে সম্পর্কটা ভারতে সোনার মূল্য নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যদিও এটি বিশ্ব বাজারে সোনার মূল্য নির্ধারণে কোন প্রভাব বিস্তার করে না। ভারতে স্থানীয় সরবরাহে চাহিদা ক্রমশ বেড়ে চলেছে; এতটাই যে বার্ষিক সোনার চাহিদা আমদানির মাধ্যমে সম্পূর্ণ করতে হয়। যদি ডলার প্রতি টাকা দুর্বল হয়ে পরে, তাহলে যেকোন ব্যক্তিকে ডলার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য আনতে অধিক টাকা প্রদান করতে হবে।
লক্ষণীয় যে, ডলারের মূল্যে গুণগ্রাহিতা অথবা অস্বীকার ক্রমাগত বিশ্বব্যাপী সোনার মূল্য বিপরীতমুখীভাবে প্রভাবিত করে চলে। তবে সোনার মূল্য প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারই একমাত্র কারণ নয়, ইতিহাসের পাতা খুললে দেখা যায় মুদ্রাস্ফীতির সময় যখন মার্কিন ডলার ভালোভাবে কার্যকর ছিলনা, তখন সোনা বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে কাজ করার প্রবণতা দেখা গেছে।