Published: 21 সেপ্টে 2018
সুকৌশলী মুঘল শিল্প মীনাকরীর উদ্ভব এবং ইতিহাস

আপনি কি জানেন যে মীনাকরীর প্রথাগত শিল্পটি মুঘলরাই ভারতে নিয়ে এসেছিল?
প্রাচীন, নিগূঢ় মীনাকরী শিল্পে সোনার পৃষ্টতলটিকে দীপ্তজ্জ্বল রঙ দিয়ে ‘মীনাকর’ নামে পরিচিত শিল্পীরা কলাই করত৷
এটি অন্যতম একটি নিখুঁত ধাতুর অলংকরণ বলে বিবেচিত যে কলাইয়ের কার্যে অতিমাত্রায় দক্ষতা, যথার্থতা এবং মনোনিবেশ প্রয়োজন৷
কিভাবে মীনাকরী কাজ ভারতে গহনার ক্ষেত্রে এত গুরুত্বপূর্ণ স্টাইল হয়ে উঠল সেই কাহিনী এখানে দেওয়া হল৷
সংক্ষেপে বললে, সোনার ওপর মীনাকরী কাজে গহনাটির পৃষ্ঠতলে ভিন্ন কলাই করার রঙ এবং চূর্ণ খনিজের সঙ্গে নিহিত করার আগে ভিন্ন নকশা খোদাই করা হয়৷ অপূর্ব সুন্দর নিখুঁত নকশাগুলিতে উজ্জ্বল রঙগুলির দ্যুতি প্রতিফলিত করে অসাধারণ নকশা তৈরি করে যা দেখতে সাহসী এবং প্রথাগত৷
একটি ফার্সী সৃষ্টি
‘মীনাকরী’ শব্দটি ফার্সী শব্দ মীনা বা মীনু থেকে এসেছে, যার অর্থ ওই ভাষায় ‘স্বর্গ’৷ আমরা আজও আধুনিক মীনাকরী গহনারয় ফার্সী শৈলির প্রভাব খুঁজে পেতে পারি৷
মীনাকরীর সঙ্গে ভারতের পরিচয়
16শ শতাব্দীতে, সম্রাট শাহজাহানের রাজদরবারের এক উচ্চপদস্থ ব্যক্তি রাজা রাম সিং রাজস্থানের সঙ্গে মীনাকরী শিল্পের পরিচয় করান৷ এই শিল্পের রসাস্বাদন করতে পারে এমন ব্যক্তিবর্গ এটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে দক্ষ শিল্পীদের লাহোর থেকে এসে রাজস্থানের মেওয়ারে কলাইয়ের কাজ শেখানোর কর্মশালা তৈরি করার জন্য আমন্ত্রণ জানান৷ এরপর খুব শীঘ্রই ভারতে রাজস্থান মীনাকরীর ব্যবসার রাজধানী হয়ে ওঠে৷
মনে করা হয় যে মীনাকরী কাজ আসলে দেওয়াল, স্তম্ভ এবং ছাদ অলংকৃত করার জন্য নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত হত কিন্তু সম্রাটের বেগমরা এই শিল্পের প্রতি প্রবল আকর্ষণ দেখায় এবং তাদের গহনার সেটি ব্যবহারের করার জন্য অনুরোধ করে৷
রাজস্থানকে অতিক্রম করে
দ্রুত রাজস্থানে কর্তৃত্ব স্থাপন করার পরে, মীনাকরীর প্রচলন মুঘল সাম্রাজ্যের অন্যান্য অংশ লক্ষ্মৌ, পাঞ্জাব এবং দিল্লিতেও সম্প্রসারিত হতে শুরু করে৷ সোনায় কলাই করার শিল্প সারা ভারত জুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, তবে প্রতি অঞ্চলের প্রযুক্তি এবং শৈলির দিক থেকে ছিল স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য৷
সবুজ-এবং-নীলের কলাই করা কাজ লক্ষ্মৌর মীনাকরদের কাছে জনপ্রিয় ছিল, অন্যদিকে বেনারসের শিল্পীরা অত্যন্তভাবে পদ্মের কলকার সাথে কালচে গোলাপী বা রোজ-গোল্ডের রঙ ব্যবহার করত৷ এই নির্দিষ্ট শৈলিটি 17শ শতাব্দীতে ফার্সী শিল্পীরা লক্ষ্মৌর অবধের দরবার পরিদর্শনে আসার সময় নিয়ে এসেছিল৷ প্রতাপগড় মীনাকরীর গ্লাস পেইন্টিই শৈলির জন্য পরিচিত৷ অন্যদিকে, জয়পুরে দেখা যায় কিছু প্রাণবন্ত গহনা যেগুলি এখনও সমৃদ্ধ মীনাকরী গহনা তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে৷




মুঘলরা আমাদের সাথে মীনাকরীর পরিচয় করিয়ে দিলেও ভারতে মীনাকরী কাজের উত্থান তাৎপর্যপূর্ণভাবে দেখা গেছে এবং আজও সারা দেশ জুড়ে গহনা প্রেমীদের কাছে এটি সমাদৃত হয়ে আসছে৷
বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন শাসন কালের প্রভাব এবং সংস্কৃতি থেকে তৈরি শিল্প প্রদর্শিত হয় বিভিন্ন পণ্যে, যা এখনও বিভিন্ন বাজারে নূপুরস ব্রোচ, কানের দুল, অন্যান্য গহনা থেকে শুরু করে মন্দিরের ছোট বেদি, চেয়ার, গহনার বাক্স, ছবির ফ্রেম আর চাবির রিং হিসাবে উপলব্ধ৷ সোনাই এই সমস্ত গহনা তৈরির প্রাথমিক ধাতু আর ভারতীয়দের কাছে তো কোন বিশেষ অনুষ্ঠানে নিজেদের আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা সবথেকে পছন্দের বিষয়৷