Published: 17 আগ 2017
সোনার শহর লঙ্কার পেছনে থাকা জনশ্রুতি
আমাদের মধ্যে অনেকেরই মহাকাব্য রামায়ণের সাথে স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে, তা ছোটবেলায় রামলীলা করাই হোক বা দশেরায় রাবণের কুশপুতুল জ্বালানো দেখাই হোক৷ কিন্তু আপনি কি জানেন যে ভারতবর্ষের সবথেকে বেশি সমাদৃত ধাতু সোনা, লঙ্কার কাহিনীর ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা নিয়েছিল? রাবণের আবাসস্থল, লঙ্কা শহর, আক্ষরিক অর্থে সোনায় তৈরি ছিল এবং পরিচিত ছিল ‘সোনার শহর লঙ্কা’ নামে৷
কিভাবে রাক্ষস রাজ লক্ষার অধিপতি হয়েছিলেন তার দুটি আখ্যান বর্তমান৷
হিন্দুপুরাণে, বিশ্বাস করা হয় যে সোনার শহর লঙ্কা ভগবান বিশ্বকর্মা তৈরি করেছিলেন-“বিশ্বের প্রধান প্রকৌশলী”, যখন ভগবান শিব তাঁর ও দেবী পার্বতীর বিবাহ পরবর্তী অবস্থানের জন্য বিশ্বকর্মাকে একটি সুন্দর জায়গা তৈরি করতে বলেন তখন ভগবান বিশ্বকর্মা সোনা দিয়ে একটি সুন্দর প্রাসাদ নির্মাণ করেন৷
Image Source: Source
এটি তৈরি হওয়ার পরে, শহরের একজন পুরহিতকে ‘গৃহপ্রবেশ’ বা ঘরে অনুপ্রবেশের রীতিনীতি পালনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়৷ সেই পুরহিত স্বয়ং রাবণই ছিলেন! রাক্ষস রাজ হওয়ার আগে, ঋষি রাবণ ছিলেন একজন গুণী শিক্ষক৷ যখন তিনি লঙ্কা দেখলেন, তখন তিনি তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গেলেন৷ তিনি দক্ষিণা স্বরূপ সেই প্রাসাদটি চাইলেন এবং ভগবান শিব তার মনবাঞ্ছা পুরণ করলেন!
লঙ্কা কিভাবে রাবণের অধীনে এলো সে নিয়ে বিকল্প সংস্করণটিতে বলা হয়েছে যে তিনি তার সৎ ভাই কুবেরকে যুদ্ধে হারায়৷ এমনকি, পুষ্পক বিমাণ, সোনার উড়োজাহাজও কুবেরেরই ছিল৷ এটা লক্ষ্যণীয় যে রাবণের আসল আদি পাপ লোভই তাঁর ভাগ্যকে যান্ত্রিকভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে, যার ফলে পুষ্পক বিমানে করে তিনি সীতাকে হরণ করেন এবং খুব তাড়াতাড়ি তাঁকে লঙ্কায় ফিরিয়ে আনেন৷
Image Source: Source
অনুসঙ্গী: কুবেরের খোঁজ: ধনসম্পত্তির দেবতা
যেমন আমরা সবাই জানি, সীতার অপহরণই গুরুত্বপূর্ণ কিছু কার্যের ঘোষণা করে, এবং তার মধ্যে একটি হল লঙ্কায় হনুমানের আগমন৷ নিজের লেজ দিয়ে সারা শহরে আগুন লাগানোর আগে, এই বানর ভগবান সোনার শহরে তাড়িত হয়েছিল৷ রামকে হনুমান বলেছিল যে সোনা দিয়ে গড়া এমন জায়গায় আঘাত করা মুশকিল! কারণ শহরটি সোনা দিয়ে তৈরি, সেখানে একটি মাত্র প্রাচীর ছিল যা পুরো শহরটিকে ঘিরে ছিল এবং সেই প্রাচীরটিও সোনায় তৈরি৷ প্রাচীরটির ঠিক পিছনেই রত্ন, প্রবাল এবং মুক্ত ছড়ানো শহরটিতে ৷ এখানে একটা টানা-সেতুও ছিল যেটি নাড়ানো যায়না এতোটাই দৃঢ় এবং এটির পাশে যে দেওয়াল আছে তাও সোনায় তৈরি ৷
Image Source: Source
যখন রাম সীতাকে বাঁচায়, রাবণকে হারিয়ে, তখন তিনি আর সীতা অযোধ্যায় তাদের আবাসে ফিরে আসেন সেই সোনার উড়োজাহাজ পুষ্পক বিমানে করেই৷
লঙ্কা সম্পর্কিত সমস্ত জনশ্রুতির জন্য, একটা প্রশ্ন থেকেই যায়: সত্যিই কি এমন কোন শহর বাস্তবে ছিল? যদিও বেশিরভাগ মানুষ এটা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে আধুনিকযুগের শ্রীলঙ্কাই ছিল রাবণের লঙ্কা, কিন্তু এ নিয়েও অনেক বিতর্ক বর্তমান৷ নতুন রিপোর্ট অনুযায়ী, আসল লঙ্কা পশ্চিম ওড়িশায় সোনেপুর নামক স্থানের কাছে অবস্থিত ছিল৷ তবে নিশ্চিতরূপে কিছুই জানা নেই। নামটি নিজেও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে একটি নিশ্চয়তা বহন করে যে রাবণের সেই প্রাসাদ সত্যিই ‘সোনার শহর লঙ্কা’ ছিল৷