Published: 10 সেপ্টে 2018
একটি কৌশলগত সম্পদ হিসাবে স্বর্ণের প্রাসঙ্গিকতা
সোনার গুরুত্ব কারো কাছে সঞ্চয়ের মূল্যে, কারো কাছে-বা আশা ও আবেগের বাহক হিসেবে, আবার কারো কাছে তার আর্থিক মূল্যে প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকেই মানুষদের কাছে প্রতিভাত হয়ে থাকে । এই বৈচিত্র্যময়তার বাইরেও বিগত দুই দশক ধরে ভারতীয় অর্থনীতি যে বিপুল বিস্তারলাভ করেছে তার নেপথ্যে অন্যতম কারণ হল স্বর্ণ সংগ্রাহক ও স্বর্ণ বিনিয়োগের বিশাল হারে সংখ্যা বৃদ্ধি।
সোনা যে-কোনো পোর্টফোলিওতেই মুখ্য চারটি ভূমিকা পালন করে থাকে
- এটি দীর্ঘমেয়াদী রিটার্ন-এর যোগান দিয়ে থাকে
- এটি বিশেষ করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কালে, ঝুঁকির প্রশমন ঘটায়
- এটি একটি তরল/লঘু সম্পদের (liquid asset) ঝুঁকিহীন আমানত
- সঞ্চয় মূল্য হিসেবে পেপার মানি যেমন দুর্দান্ত কাজে এসেছে সোনারও আছে তেমন ফিয়াট মুদ্রা। ফিয়াট মুদ্রা হল সরকার অনুমোদিত সেই মুদ্রা, যা একটি বাস্তব পণ্য দ্বারা সমর্থিত হয় না। ফিয়াট মুদ্রার মান, যেসব উপাদান দ্বারা পণ্য তৈরী হয়েছে তার পরিবর্তে, পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের সম্পর্কের নিরিখে সম্পন্ন করা হয়।
সাম্প্রতিককালের বিশ্ব স্বর্ণ পরিষদের ( World Gold Council) গবেষণায় দেখা গেছে যে বিগত দশকে উচ্চ-ঝুঁকি সম্পন্ন রিটার্নের ক্ষেত্রে 10 % সোনা যোগ করায় সাধারণ অবসরকালীনভাতা তহবিলের পোর্টফোলিও রিটার্ন, বৃদ্ধি পেতে পারে ও অনিশ্চয়তা কমতে পারে।
পরিচালক হিসাবে ব্যয় ও বিনিয়োগ
বিনিয়োগকারীদের জন্য সোনার বাজারের দুটি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য আছে : ক) অভাব, এবং খ) প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার মতো একটা বড়ো বাজার,- যার মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কও সংশ্লিষ্ট । দীর্ঘমেয়াদী ব্যক্তিগত ও জাতীয় সম্পদের সম্প্রসারণে স্বর্ণের চাহিদা, বিনিয়োগের পাশাপাশি গহনা হিসাবেও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিলাসদ্রব্য,বৈদ্যুতিন উপাদান, বিনিয়োগ, বিবিধ পোর্টফোলিও ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বর্ণের বিবিধ ব্যবহার তার চাহিদার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যের জন্ম দিয়েছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কালেও সোনা সরবরাহের ধারটি সুষ্ঠু ভাবে বজায় থাকে।
বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলোর কাছ ঝুঁকির বৈচিত্র্যময়তার দিকটি একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় বিষয়। 2010 সাল থেকে, উদীয়মান বাজার অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি সোনার চাহিদার পাকা খরিদ্দার।
একটি নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে স্বর্ণ
বিগত 30 বছরে সোনার দাম পদ্ধতিগতভাবে ঝুঁকির সময়ে বেড়েছে। যখনই বাজারের সংশোধন একাধিক ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করেছে অথবা কিছু সময় ধরে তার রেশ চলেছে তখনই সোনা তাতে এক সক্রিয় প্রতিবন্ধকের ভূমিকা পালন করেছে।
যখন ইউ.এস-এর অর্থনীতি বৃহত্তর বিশ্বমন্দায় পতিত হয়েছিল, সেই সময় সোনার দাম লক্ষণীয় ভাবে সাড়া দিয়েছিল। একই রকম ভাবে ইউরোপের বাইরের লগ্নিকারীরা 2015-তে ঘটা গ্রিস ডিফল্ট-এর কারণে বাড়তির সম্ভাবনা ছেড়ে দিয়েছিল।
আবার সোনা অন্যান্য সঞ্চয়দ্রব্য ও পণ্যের তুলনায় অনেক কম পরিবর্তনশীল। 2007 থেকে শুরু করে 2017 পর্যন্ত শেয়ার, শেয়ার সূচক এবং স্বর্ণের উপলব্ধ পরিবর্তনশীলতা শেয়ার তালিকার নিচের দিকেই থাকে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সোনার দাম শেয়ারের দামের প্রতিমুখে চলতে থাকে বলে অন্যান্য সম্পদ শ্রেণীর তুলনায় লগ্নিকারীরা, সোনার নিরাপত্তার ওপর বেশি ভরসা করে দ্রুত নিয়মিতভাবে সোনা বিক্রি বন্ধ করে দেয়।
রিটার্নের উৎস হিসাবে সোনা
অনিশ্চয়তারকালে সোনার মূল্য সম্পর্কে সকলেই অবগত কিন্তু যেটা স্বল্পজ্ঞাত তা হল ধাতু থেকে দীর্ঘমেয়াদি রিটার্নের বিষয়টি শেয়ার ও পণ্য বা বন্ডের তুলনায় উচ্চতর।
এখনও পর্যন্ত বৃহৎ ও খোলা বাজারে স্বর্ণ বাণিজ্য দুর্লভ । বিগত 20 বছরে খনি উৎপাদন প্রতি বছরে গড়ে 1.6 % হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সংগ্রাহক, লগ্নিকারী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমূহে সোনার ব্যাপক চাহিদা, কৌশলগত সম্পদ হিসেবে সোনার ভূমিকাটি ঘনীভূত করে তুলেছে। ভারত, চীন ও মধ্যপ্রাচ্যে স্বর্ণের চাহিদা, বিশ্বব্যাপী চাহিদার 60%।
3%-এর বেশি মুদ্রাস্ফীতির সময়, সোনার 14%-এর বেশি দাম বৃদ্ধি, লগ্নিকারকদের রক্ষা করেছিল।
অক্সফোর্ডের অর্থনৈতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে সোনা ডিফ্লেশনের সময় ভালো কাজ দেয়।
সমস্ত প্রকার সম্পত্তিকে পরাভূত করার সম্পত্তি
প্রাতিষ্ঠানিক লগ্নিকারীরা স্বল্পমেয়াদী লাভ কে বাড়াতে ইচ্ছুক। অন্যদিকে ব্যক্তিগত লগ্নিকারীরা কম ঝুঁকি নিতে এবং দীর্ঘমেয়াদি রিটার্নের ওপর ভরসা করে। তরল সম্পদ হিসাবে ই.টি.এফ-এর স্বরূপে অথবা সোনার বাট বা মুদ্রা হিসাবে সোনা সঞ্চয় যে ব্যক্তিগত থেকে প্রাতিষ্ঠানিক এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লগ্নির পক্ষেও বেশি সুবিধাজনক এখন তা বোঝবার সময় এসেছে।
সোনাকে এখন শুধুই অলঙ্কার হিসেবে নয় বরং অন্যতম উৎকৃষ্টমানের লগ্নিসামগ্রী হিসাবেও দেখা উচিৎ।
প্রবন্ধ সূত্র - ডাব্লিউ.জি.সি.( WGC) রিপোর্ট - দ্য রিলেভেন্স অফ গোল্ড অ্যাজ এ স্ট্র্যাটেজিক অ্যাসেট