Published: 09 ফেব্রু 2018
দক্ষিণ ভারতের প্রতীকমূলক সোনার গহনা
ভারতের গহনার গুরুত্ব অলঙ্করণের থেকেও বেশি; এটির ধর্মীয় এবং আচারগত গুরুত্বও রয়েছে। ধাতুটির মাপ এবং আকার সম্প্রদায়, জাতি ও জাতের পাশাপাশি রাজ্য অথবা অঞ্চলেরও প্রতিনিধিত্ব করে। সোনার দিয়ে তৈরি অলঙ্কার প্রতিদিন পরা হয়। অতিরিক্তভাবে, উৎসব এবং অন্যান্য শুভ অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানের অলঙ্কার তৈরি করা হয়।
ভারতীয় গহনার অহংকারের সমৃদ্ধশীল এবং ব্যপ্ত ইতিহাস ‘ভারতের সোনার ক্ষেত্র’ অর্থাৎ দক্ষিণ ভারত থেকে অলঙ্কৃত হয়ে আসছে। এই প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে, আমরা দক্ষিণ ভারতের প্রতীকমূলক গহনাগুলির সাথে আপনার পরিচয় করাব।
জাড়ানাগাস –
Image source
এটির অর্থ চুলের সর্প; এটি একটি কবরীর অলংকার যেটি সাপের সাথে সম্পর্কীত। “জাড়া” শব্দের অর্থ হল চুল এবং “নাগাস” হল সর্পসমূহ। এটা বিশ্বাস করা হয় যে কোন মহিলার চুল তার হাঁটু পর্যন্ত ঢলে পরলে তা কালো কোবরার সদৃশ দেখায়।
দক্ষিণ ভারতীয় মহিলারা তাদের চুল ফুল দিয়ে সাজায় আর তাই বেশিরভাগ চুলের অলংকারে ফুলের ডিজাইন থাকে।
তাল্লি অথবা মঙ্গলায়ম -
Image Source
মঙ্গলসূত্র দক্ষিণ ভারত জুড়ে বিবাহিত মহিলাদের একটি প্রথাগত প্রতীক। পাত্রীর গলায় পাত্র তাদের বিয়ের দিন তাল্লি বেঁধে দেয় যা পাত্রীকে সুমঙ্গলী তথা একজন পবিত্র বিবাহিত মহিলা হিসাবে নির্দেশিত করে। তাল্লিতে একটি পেনডেন্ট সমেত একটি সোনার সুতো থাকে যা স্থানীয় প্রথা অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
কালাটাউরু –
এই নেকলেসটি বিয়ের কনে শুধুমাত্র তার বিয়ের দিন পরে-এই ভারি গহনাটি প্রতিদিন পরা অসম্ভব ব্যাপার। দক্ষিণ ভারতের মহিলারা কালাটাউরু পরে তাদের ছেলের বিয়ের দিন এবং/অথবা তাদের স্বামীর ষষ্টিতম জন্মদিনের দিন।
কাসু মালা –
Image Source
এই নেকলেসটি এক শত সোনার কয়েন দিয়ে তৈরি হয় যেগুলিতে দেবী ও দেবতার মূর্তি খোদাই করা থাকে।
পম্বাদাম –
Image source
এই কানেরদুলগুলি বিভিন্ন জ্যামিতিক আকারে ডিজাইন করা হয় যেমন বৃত্তাকার, কৌণিক ইত্যাদি। এখানে পম্বা কথার অর্থ হল সর্প এবং “পম্বাদাম” শব্দের অর্থ হল সাপের ফণা। এই কানের দুলগুলি সাপের মত দেখতে হয়।
কানের দুলে যে ওজন দেওয়া হয়, তার জন্য কানের লতিতে ভেদনের জন্য একটি বিশেষ ছুরি ব্যবহার করা হয়, যেটি ক্রমশ বড় হয়েছে পম্বাদামের কারণে।
মুদিচু – এই কানেরদুলগুলি পেঁচানো সাপের মত দেখতে হয় এবং দক্ষিণভারতের অন্যতম জনপ্রিয় অলংকারের একটি। রিংগুলি তৈরির জন্য সোনার তার বোনা হয়।
প্রসারিত কানের লতি দক্ষিণভারতের প্রত্যন্ত সম্প্রদায়গুলির মধ্যে একটি সাধারণ বিষয়। তাদের ভারি কানেরদুলগুলি খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি হয় এবং বিশেষ ছুরি ও পদ্ধতিতে ভেদন করা হয়।
আকর্ষণীয়ভাবে, কুরাট্টি সম্প্রদায়ের মেয়েরা কুনাক্কু পরে, প্রাচীন কালের এমন একটি বড় কানেরদুল যা তাদের কানের লতিকে প্রসারিত করে।
তানদাত্তি হল আরেকটি বিশালাকৃতির কানেরদুল যা অবিবাহিত মেয়েরা পরে। এই কানেরদুলগুলি সোনার পাতা দিয়ে তৈরি করা হয় যা মোম দিয়ে পূরণ করা হয়।
এখানে কিছু চারুকলা আছে যা ঐতিহ্যের সাথে হলুদ ধাতুর দৃঢ় সম্পর্ককে চিত্রিত করে। এই অলংকারগুলির মধ্যে কিছু অদৃশ্য হয়ে গেছে বা আধুনিক গহনার সাথে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। তবু, আপনি এখনও দক্ষিণ ভারতে শিল্পীদের বংশের প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে এগুলির খোঁজ পেতে পারেন।