Published: 11 সেপ্টে 2017
মন্দিরের গহনা- সোনা ও ঐতিহ্য
ভারতের দক্ষিণ ভাগকে বিভিন্ন মন্দিরের আঁতুড় ঘর বলা যায় যা বিভিন্ন রাজত্বকালকে উৎসর্গ করে আসছে৷ এই মন্দিরগুলিতে, দেবতাদের প্রতিমূর্তিগুলি সোনা এবং অন্যান্য মূল্যবান রত্ন দিয়ে প্রাচীনকাল থেকে সাজানো হয়৷ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তাদের গহনাগুলি সঞ্চিত হতে থাকে আর এই গহনাগুলিই মন্দির গহনা নামে বহুল প্রচলিত৷
মন্দির গহনা খাঁটি সোনায় তৈরি হয়, এর অন্তর্ভুক্ত মুকুট, মাথার অন্যান্য অলঙ্কার, কানের দুল, নাকের অলঙ্কার, নেকলেস, বালা, কোমরবন্দ, পায়েল ইত্যাদি৷ এই গহনাগুলি হয় মূলত দেবতাদের জন্যই তৈরি হয় অথবা মন্দিরে দান করা সঠিকভাবে ফিট না করা সোনার গহনা বা সোনার বার থেকে পুনরায় তৈরি হয়৷ প্রতিমূর্তি ছাড়া অতিরিক্তভাবে, মন্দিরের বা থিয়েটারের শিল্পীরাও তাদের পৌরাণিক চরিত্রের কার্য সম্পাদনের জন্য মন্দির গহনা পরে৷ এই গহনাগুলি নাচের গহনা নামেও পরিচিত৷
আজকাল, প্রথাগত মন্দির গহনা কেবলমাত্র দেবতা এবং শিল্পীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই৷ এই ধরণের গহনার জনপ্রিয়তা তরুণ ভারতীয়দের মধ্যে দেখা যাচ্ছে যারা এর নিখুঁত ডিজাইন ভালোবাসে এবং যা আধুনিক ডিজাইনের সাথে ভারতীয় ঐতিহ্যের মিশেলকে উপস্থাপন করে৷ প্রাত্যহিক সাজপোশাকেই হোক বা কোন বিশেষ দিনেই হোক না কেন মহিলারা আকর্ষণীয়তা এবং সৃজনশীলতার স্পর্শ যোগ করতেই এইধরণের গহনা ব্যবহার করে৷
অত্যন্ত প্রচলিত মন্দির-প্রভাবিত গহনাগুলি হল কানের দুল, বালা, চেন, ব্রেসলেট, নেকলেস, কন্ঠহার, আংটি এবং পায়ের চুটকি৷ সমস্ত ডিজাইনের মধ্যে, ঘন্টা-আকৃতির ডিজাইনের কানের দুলের মন্দির গহনার ডিজাইনের মধ্যে সবথেকে প্রিয় ডিজাইন৷ এই কানের দুলগুলি সাধারণত কারুকার্যহীন সোনা দিয়ে সৃজন করা হয়, যা প্রথাগত শৈলির উদাহরণস্বরূপ৷ একইভাবে, বালার সাথে আবদ্ধ থাকা ঝুলন্ত ঘন্টা সারা ভারত জুড়ে মহিলাদের দৃষ্টি মোহিত করে তোলে৷
মন্দির গহনার আরেকটি সেরা নিদর্শন হল সোনার চেন যেটিতে কোন হিন্দু দেবতার প্রতিমূর্তি, সোনার কয়েন, ফুল, ছোট পেইসলি অথবা রুদ্রাক্ষ সোনার রজ্জু দিয়ে আটকানো থাকে৷ চেনের পাশাপাশি, মহিলারা মন্দির নেকলেসও পরে যার মধ্যে মূলত শ্রী লক্ষ্মীর মূর্তি থাকে, যিনি ধনসম্পত্তির দেবী–
ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী এবং বিয়ের কনেরা প্রায়সই তাদের লম্বা ঘন চুল সাজায় মন্দিরের সাজ-সরঞ্জাম দিয়ে যা তাদের প্রথাগত পোশাকের রূপকে আরও স্পষ্ট করে৷ এর মধ্যে একটি হল তাদের কোমর জুড়ে থাকা কোমরবন্দ যেটির মধ্যে সোনার প্রলেপ থাকে এবং ঘন্টা দিয়ে সাজানো থাকে৷
মন্দির গহনা বহু শতাব্দী ধরে উঠে আসা ভারতের স্বর্গীয় এবং রাজকীয় আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের কাহিনী শোনায়৷ এই গহনাগুলি দক্ষিণ ভারতের প্রাচীন পরিবার গোষ্ঠীর হস্তনির্মিত এবং যা বলা হয় অতি নিজস্ব ডিজাইন যা বর্তমানে ব্যাপকভাবে ভারতে এবং বিদেশে কেনা হচ্ছে৷ এর তাৎপর্য এবং বর্তমান চাহিদা বিবেচনা করে, আমাদের মনে হয় মন্দির গহনা ভবিষ্যতেও অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গহনার ডিজাইন হিসাবে থেকে যাবে৷