Published: 31 আগ 2017
দক্ষিণ ভারতের প্রথাগত সোনার নেকলেস
অস্তিত্বের সূচনাকাল থেকেই, ভারতবর্ষ সোনার ভাণ্ডারের দেশ যা সর্বদা বিশ্ব জোড়া দর্শক এবং ক্রেতাদের আকর্ষণ করে চলেছে৷ এই বৈচিত্রময় দেশের গহনার বাক্স অদ্ভূত চিত্তাকর্ষক নিখুঁত ডিজাইনের বৈচিত্র্য দেখায় যা অঞ্চল থেকে অঞ্চলে ভিন্ন হয়৷ ভারতীয়রা মানব অবয়বকে উদযাপিত করতে নিখুঁত ডিজাইন আবিষ্কার করার ও তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রচুর শ্রম ব্যয় করেছে৷
এমন একটি গহনা যা অসংখ্য নকশায় এবং আকারে পাওয়া যায় তা হল সোনার নেকলেস (হিন্দিতে ‘হার’)৷ রাজ্য ভেদে এমনকি সম্প্রদায় ভেদেও এই গহনাটি ভিন্ন হয়৷ আমরা ভারতের প্রথাগত প্রিজম থেকে সর্বোৎকৃষ্ট এবং মার্জিত কিছু নেকপিসের আপনাদের এখানে দেখাতে চলেছি৷
ভারতের সোনার জমিন-দক্ষিন ভারত সবসময়ই তার সমৃদ্ধশালী এবং ঐতিহ্যবাহী সোনার অলঙ্কারের জন্য খ্যাত৷
তামিলনাড়ু রাজ্যের কসুমলি নেকলেস সোনার কয়েন ব্যবহার করে তৈরি হয় আর এটি কোমড় পর্যন্ত লম্বা হয়৷
গৌরিশঙ্করম নেকলেস এ সোনার পুঁতির বদলে পবিত্র রুদ্রাক্ষ থাকে আর থাকে সোনার পেনডেন্ট যেখানে ভগবান শিবের তান্ডব রূপে নটরাজ মূর্তি প্রদর্শিত হয়৷
মঙ্গ মালাই আরেক ধরণের প্রথাগত সোনার নেকলেস যেটির ভারি সোনার মালার ধারে আম-আকৃতির ডিজাইন করা থাকে (পইসলি নামে পরিচিত)৷
মুল্লাই মোত্তু মালাই আজও অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সোনার নেকলেস৷ সুগন্ধী জুঁই ফুলের মুলুক অত্যন্ত সুন্দরভাবে সোনা দিয়ে অনুকরণ করা হয়৷
কর্ণাটকের কোক্কে থাথিঅর্ধচন্দ্রাকার সোনার পেনডেন্টের সেট৷ একইভাবে, জো মালা একটি ফাঁপা ল্যাক-ফিল করা সোনার পুঁতি যা একটি সোনার-টুপি পরানো টাসেলের সাথে কালো রজ্জুর ওপর গ্রথিত থাকে৷ এই গলায় পড়ার গহনাগুলি কুর্গের বিয়ের গহনার তাৎপর্যপূর্ণ অংশ৷
অন্য রাজ্যগুলির সদৃশ, কেরালা তার নিখুঁত কারুশিল্প এবং ডিজাইনের জন্য বিখ্যাত৷ ফিলিগ্রি শিল্পশৈলি প্রদর্শন করে ভালাইপ্পিনাল; লেসের কাজের সম্পূরক যা ফুলের সাথের সোনার তারের বুনন করে৷
ফুলের নেকলেস পরিচিত পু-তালি নামে৷ এই কারকনেট (কলার-স্টাইলের নেকলেস)টি অভিন্ন ফুলের প্রসঙ্গ সহ সোনার হালকা পাত দিয়ে তৈরি করা হয়৷
কুজহি মিন্না মালাই হল মুদ্রাঙ্কিত সোনার ইউনিট এবং ফিলিগ্রি চারুকলার মিশ্রণ৷ এই নেকলেসের নাম সেই কাপ (কুজহি) থেকে এসেছে যা উজ্জ্বল (মিন্না)৷
পবন সারা নেকলেস কাসুমালির মতই দেখতে; এই নেকলেসটি সাতাশটি সোনার কয়েন দিয়ে তৈরি যার মধ্যে রানি ভিক্টোরিয়ার ছবি তুলে ধরা আছে, এই চিত্রগুলিতে তাঁর 50 বছরের পরিসরে চিত্র সংগ্রহীত করা থাকে৷ ভারতের সম্রাজ্ঞী হিসাবে রানির তরুণী থেকে বৃদ্ধ বয়সের ছবি কয়েনের কেন্দ্রে চিত্রিত করে৷
মহারাষ্ট্রের চম্পাকলী নেকলেস মাইকেলিয়া চম্পার সোনার মুকুল দ্বারা প্রভাবিত৷ এই নেকলেসের উপাদানগুলি দিয়ে একটি সোনার পাতলা পাতের ওপর কাজ করা হয়৷
কোলহাপুরী সাজ হল কোলহাপুর শহরের নেকলেস; একটি সোনার নেকলেস যা ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতারকে মুদ্রাঙ্কিত প্রতীকের সারিতে গঠিত করে৷ এই নেকলেস সৌভাগ্য, আনন্দ, সাফল্য এবং সমৃদ্ধির জন্য পরে৷
সোনার বহুমুখী পুঁতির সাতটি সারি দিয়ে তৈরি হয় কান্তি৷ প্রাচীন লিপিতে উল্লেখিত কাঁথা-তুড়া এবং কাঁথিকা হল এই মার্জিতভাবে সুন্দর নেকলেসটির পুর্বসূরি৷
কোলহাপুরের আরেকটি নেকলেস হল থুসি৷ . কাছাকাছি স্থাপিত সোনার বল দ্বারা গঠিত এই মোটা চেনটি চামড়ার রজ্জু বা দড়়ি দিয়ে পাকানো থাকে৷ থুসি কণ্ঠ জুড়ে থাকে৷
গুজরাতের সাত নাড়া নেকলেস একটি সাত সূত্রকে গাঁথা কারকনেট৷ ভারতবর্ষে, সাত সংখ্যাটি শুভ বলে পরিগণিত হয়৷
কচ্ছের ভাটিয়া সম্প্রদায়ের জভলি মালা প্রতিটি শুভ অনুষ্ঠানে সোনার মাহাত্ম প্রদর্শন করে৷ এই ডিজাইনটি সোনার কণা (জাভালি)দ্বারা অনুপ্রাণিত যা ফলপ্রসূতা এবং প্রাচুর্যকে চিত্রিত করে, আর এটি সোনার চেনে গ্রথিত থাকে৷ এই নেকপিসটি সাধারণত নতুন মাকে দেওয়া হয়৷
রাজস্থানের রাজ্যের একটি ধরণ হল হাসলি (অনমনীয় নেকলেস)৷ একটি কঠিন সোনার চক্র জুড়ে সোনার তার মোড়ানো এবং বোনা থাকে৷
‘গোলাপী শহর’ জয়পুরের হল বালেওরা৷ এই নেকপিসটি সাতটি চেন দিয়ে তৈরি, যেগুলি আবার রত্ন-সেট স্পেসার এবং একটি পেনডেন্ট দিয়ে বিক্ষিপ্ত করা থাকে৷ বালেওরা সাধারণত রাজস্থানের বণিক সম্প্রদায়ের পুরুষরা পরে৷
এই সোনার নেকলেসটির বয়স অনেক, কিন্তু এখনও ভারতীয় প্রথার অংশ হিসাবে সাবলীল এবং বর্তমানে মূলধারার অংশ হিসাবে বিবেচিত৷ এখানে সোনার নেকলেসের সামান্য কয়েকটির উদাহরণ দেওয়া হল; স্বভাবতই বলা যায় আরও অনেক এখনও বাকি আছে৷