Published: 28 অক্টো 2021
সোনার এক্সট্রা-টেরেস্ট্রিয়াল মাইনিং-এর ভবিষ্যত
মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝে অসংখ্য গ্রহাণুর মাঝে একটি গ্রহাণু আছে যার নাম হচ্ছে ১৬ সাইকি। ১৬ সাইকির ব্যাস মোটামুটি ২২৬ কিলোমিটার এবং এটি অন্যান্য আবিষ্কৃত গ্রহাণুর মত নয়, পাথর এবং বরফের বদলে এটি সম্পূর্ণ ধাতু দ্বারা গঠিত বলে মনে করা হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে ১৬ সাইকি হচ্ছে একটি প্রাচীন গ্রহের অংশ এবং এটিতে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে আমাদের লোহা এবং নিকেলের চাহিদা মেটাবার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ ধাতু রয়েছে। আরো মজার ব্যাপার হল 16 সাইকিতে অন্যান্য মূল্যবান ধাতুরও প্রচুর ভাণ্ডার আছে বলে মনে করা হয়- এর কেন্দ্রস্থলের খাঁটি সোনার মূল্য প্রায় $৭00 কুইন্টিলিয়ন ডলার। এছাড়া এর কেন্দ্রস্থলে প্ল্যাটিনামের মতো মূল্যবান ধাতুও আছে। NASA ২০২২ সালে ১৬ সাইকিতে একটি মহাকাশযান পাঠাবে যা ২১ মাস ধরে তার উপরিভাগের ম্যাপিং করবে এবং এই গ্রহাণুর বৈশিষ্ট্যগুলি সম্বন্ধে জানবে।
সোনা সহ মূল্যবান ধাতুগুলি আরও বেশ কয়েকটি গ্রহাণু এবং নিভে যাওয়া ধূমকেতুর মধ্যেও পাওয়া যায়, চাঁদেও এইসব ধাতুর হদিশ পাওয়া যায়। গ্রহাণু খননই সোনার উত্তোলনের ভবিষ্যত, আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া এটির ফলাফল কি হতে পারে:
গ্রহাণু খনির শিল্পের বিস্তার
২০১৭ সালে, গ্রহাণু খনির শিল্পের মূল্য ছিল ৭১২ মিলিয়ন ডলার, কিন্তু এটি ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতি বছর ২৪.৪% CAGR গতিতে বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যার ফলে এই শিল্পের মূল্য দাঁড়াবে 3.9 বিলিয়ন ডলার। গ্রহাণু খনির পদ্ধতির মধ্যে পড়ে গ্রহাণু এবং অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তু চিহ্নিত করা যার মধ্যে লাভজনক পরিমাণে ধাতু এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ রয়েছে, তাদের উপর খনন করার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করা, ধাতু এবং খনিজগুলি খনন করা এবং গবেষণার বা ব্যবহারের জন্য সেগুলি পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো। সরকারি এবং বেসরকারি উভয় সংস্থাই এই কাজ পার্টনারশিপে করে। আমেরিকান স্পেস এজেন্সি এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলি বর্তমানে এই কাজে এগিয়ে আছে। NASA ২০২২ সালে সাইকি মিশন চালু করতে চলেছে। এটি মনুষ্যবিহীন মিশন হবে, যাতে সাইকি মহাকাশযানটি অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে ১৬ সাইকি গ্রহাণুর উপরিভাগের উপাদান বিশ্লেষণ এবং ম্যাপিং করবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া এই কাজের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য ভূ-রাজনৈতিক দেশগুলির মধ্যে রয়েছে ল্যাটিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা। এছাড়া এই কাজে আগ্রহী বিশিষ্ট বেসরকারী মহাকাশ কোম্পানিগুলি হল iSpace, Kleos Space, Asteroid Mining Company, Planetary Resources এবং Virgin Galactic.
চাঁদের খনন করেই কী এবার সোনার ভান্ডার পাওয়া যাবে?
গ্রহাণু খনন লাভজনক হতে পারে, কিন্তু এর জন্য আমদের প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। পৃথিবীর তুলনামূলক কাছাকাছি গ্রহাণুগুলি এখনও অনেক দূরে এবং তাদেরকে খননের উপযুক্ত করে তুলতে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি কক্ষপথে নিয়ে আস্তে হবে, যা কোন সহজ কাজ নয়। তবে, এর চেয়ে সহজ কাজ হল চাঁদে খনন করা।
চাঁদে তিনটি উপাদান রয়েছে যা খননের দৃষ্টিকোণ থেকে এটিকে আকর্ষণীয় করে তোলে: হিলিয়াম-3, জল এবং দুর্লভ পৃথিবীর ধাতু।
চাঁদের খননকার্য(এবং গ্রহাণুরও) অনেক প্রযুক্তিগত এবং লজিস্টিকগত বাধা সৃষ্টি করে। চাঁদে খনির কাজ করার জন্য আমাদেরকে এর উপর উপযুক্ত কাঠামো তৈরী করতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক 3D প্রিন্টার, অটোমেটিক খননকারী রোবট, প্রক্রিয়াকরণ সরঞ্জাম এবং এই সমস্ত কাজ পরিচালনা করার জন্য একটি ঘাঁটি। চাঁদে এই সরঞ্জাম পাঠানোতেও একই পরিমাণ খরচ হবে যতটা এই যন্ত্রপাতিগুলির দাম হবে; চাঁদ প্রায় ৪০০০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং বর্তমানে চাঁদের মাটিতে ১ কেজি উপকরণ পাঠাতে আনুমানিক পনের হাজার ডলার খরচ হয়। SpaceX-এর মতো কোম্পানিগুলি অবশ্য পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেটে তৈরী করার চেষ্টা করছে যাতে করে এই খরচ কিছুটা কম করা যায়।
উপরন্তু, প্রক্রিয়াকরণের জন্য চাঁদের মাটি এবং আকরিক পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো সম্ভবপর নয়; এই ধরনের প্রক্রিয়াকরণ চাঁদেই করতে হতে পারে, আধা বা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াজাত সামগ্রীগুলি রকেট বা শুধু এই কাজের জন্য তৈরী বিশেষ ডেলিভারি সিস্টেমের মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হতে পারে। এ ধরনের জটিল অপারেশন পৃথিবীতে বসে পরিচালনা করলে নানারকম জটিল পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হতে পারে। এবং সবশেষে, এই ধরনের একটি অপারেশনে আইনি এবং ভূ-রাজনৈতিক জটিলতাও তৈরী করবে - যাতে প্রশ্ন উঠতে পারে যে চাঁদ ও সেইসাথে গ্রহাণুর মাটি বা পাথর কী "স্পেস কমন্স" হিসাবে বিবেচনা করা হবে? পৃথিবীর সকল দেশেরই কী এই সম্পদের প্রতি সমান অধিকার থাকবে?
যদিও কোনও সরকারী বা বেসরকারী মহাকাশ সংস্থা এখনও চাঁদে খনন করার চেষ্টা করেনি তবে এই কাজের সম্ভাবনা প্রতিদিন বাড়ছে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন যা আমেরিকান কোম্পানিগুলিকে চাঁদে এবং অন্যান্য মহাজাগতিক জায়গায় খনির কাজের জন্য উৎসাহিত করে। এই নির্বাহী আদেশ বাণিজ্যিক অংশীদারদের মহাকাশের সম্পদ উদ্ধার এবং ব্যবহারও করতে উৎসাহিত করে। চাঁদে খনন করার কাজ যদিও এখনও যথেষ্ট পরিমাণে প্রযুক্তিগত এবং লজিস্টিক বাধার তৈরী করে। এই কাজের জন্য যন্ত্রপাতি ও উপকরণগুলিকে নিয়ে মহাকাশে যাওয়া আসা করতে হতে পারে, আধা অটোমেটিক রোবট এবং মেশিন দিয়ে আকরিক খনন ও প্রক্রিয়াকরণ এবং আধা বা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াজাত ধাতু এবং গ্যাস পৃথিবীতে ফেরত পাঠাতে হতে পারে।
গ্রহাণুতে সোনার খননের ফলে বিশ্বের সোনার বাজারে এর প্রভাব
16 সাইকির মতো গ্রহাণুতে প্রচুর পরিমাণে সোনা মজুদ আছে এবং এই সোনা যদি খনন করা হয়, তাহলে তা বিশ্বব্যাপী সোনার বাজারে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। যদি গ্রহাণু থেকে ভালভাবে অনেক পরিমাণে সোনার উত্তোলন সম্ভব হয় তাহলে বেশী পরিমাণ সরবরাহের ফলে সোনার দাম কমতে কমতে বাজার দরে ধস নামতে পারে। সোনার সরবরাহের সমপরিমাণ চাহিদাও তৈরী হওয়া সম্ভব নয় যাতে করে সোনার বাজার দর বজায় থাকে। কিন্তু যদি বিভিন্ন কাজে ব্যবহারযোগ্য সম্পদ হিসাবে সোনার ব্যবহার বেড়ে যায় তাহলে সোনার দামের ভারসাম্য বজায় থাকবে এর দাম বাড়তেও পারে।
যাই হোক না কেন গ্রহাণুগুলি থেকে সোনার সফলভাবে উত্তোলন সম্ভব হলে বিশ্বব্যাপী এর বিশাল প্রভাব পড়বে। যেসব কোম্পানি বা সরকার সোনার খননে সফল হবে তারাই সোনার সরবরাহ ও বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করবে।