Published: 20 ফেব্রু 2018
ভারতের 4টি শ্বাসরোধ করার মত উত্তেজক স্বর্ণ মন্দির
বিশ্বের সবথেকে ঈপ্সিত ধাতু হল সোনা৷ ভিন্ন যুগ থেকে চলে আসা মানব সংস্কৃতি এবং সভ্যতা এই হলুদ ধাতুর প্রশংসা এবং সম্মান না করে পারেনি৷ এটি তাপ প্রতিফলিত করে এবং স্থাপত্যে ব্যবহৃত হলে শক্তির খরচ ও কার্বনের নির্গমণ কমায়৷ সম্ভবত, এটির তাপের বিকিরণ প্রতিফলনের প্রকৃতি এটিকে প্রাচীন ইঞ্জিনিয়ার এবং স্থপতিদের কাছে ব্যক্তিগত পছন্দের বস্তু করে তুলেছে! স্থাপত্য ক্ষেত্রে ভারতীয় ভাণ্ডারের সোনার ব্যবহারের উৎকৃষ্ট উদাহরণ পাওয়া যায়-তার মন্দিরগুলিতে৷ মন্দিরগুলির ওপর সোনার আচ্ছাদন দেবাঙ্গনকে গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা রাখতে এবং শীতকালে গরম রাখতে সাহায্য করে৷
চলুন দেখে নেওয়া যাক আমাদের প্রাচীন ভারতীয় মন্দির এবং তাদের ভিতরের স্থাপত্যের বিস্ময়:
-
পদ্মনাভস্বামী মন্দির, তিরুভান্তপুরম, কেরালা
এই মন্দিরটি কেরালা ও দ্রাবিড় স্থাপত্য শৈলির আদর্শ এক মিশ্রণ৷ এখানকার ওট্টাক্কাল মন্ডপম একটি একক গ্রানাইট পাথরে তৈরি, যেটি 2.5 ফিট মোটা এবং 20 ফিট বর্গাকার৷ এটির গ্রানাইট স্তম্ভগুলি সোনা দিয়ে মোড়া৷ পূর্ব দালানের কাছে, আশি ফিট উঁচু যষ্টি বিশিষ্ট একটি দ্বজ স্তম্ভ আছে যেটি নিকটবর্তী অরণ্য থেকে আনা হয়েছিল৷ শাস্ত্র অনুযায়ী, স্থানান্তরের সময় সেগুন কাঠ (যষ্টিতে ব্যবহৃত) মাটি স্পর্শ করবে না৷ এই যষ্টিটি সম্পূর্ণভাবে সোনার ফলক দিয়ে আচ্ছাদিত৷ মন্দিরের সাত তলার গপুরাম দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্য শৈলির নিখুঁত উদাহরণ৷ এই 35 মিটার উঁচু গোপুরামে 7টি সোনার গম্বুজ আছে যা সাতটি বিশ্বকে চিহ্নিত করে৷
-
স্বর্ণ মন্দির, অমৃতসর
1577 সালে স্থাপিত, স্বর্ণ মন্দির হিন্দু ও মুসলিম স্থাপত্য শৈলির এক অনন্য মিশ্রণ৷ এটির নিচের স্তরে রয়েছে রুচিসম্পন্ন মার্বেল যা তাজমহলের মত জীবজন্তু ও ফুলের কলকা (পিয়েত্রা ডুরা কাজ) দিয়ে সজ্জিত৷ চমকপ্রদ দ্বিতীয় স্তরটি বিস্তৃত বক্রাকার সোনার প্যানেল দিয়ে ওপরে একটি গম্বুজের সাথে ঘেরা, যে গম্বুজটি 750 কিলোগ্রাম খাঁটি সোনায় তৈরি৷
-
ভেলোর স্বর্ণ মন্দির, তামিলনাড়ু
এই মন্দিরের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল মহালক্ষ্মী অথবা লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির, যেটির অর্ধ মন্ডপম এবং ভিমানমের ভিতরের ও বাইরের অংশ খাঁটি সোনায় মোড়া৷ প্রায় 100 একর জমিতে বিস্তৃত, এই মন্দিরটিতে নিখুঁত কিছু মূর্তি আছে যা শত শত দক্ষ সোনার প্রসাধকরা তৈরি করেছিল৷ এগুলির বাইরের অংশ সোনার প্লেট এবং পাত দিয়ে আচ্ছাদিত, মন্দিরটির মোট খরচ আনুমানিক 300 কোটি (মার্কিন ডলারে $65 মিলিয়ন)৷ এই মন্দির গড়তে 1500 কিলোগ্রাম সোনা ব্যবহৃত হয়েছিল৷
-
কাশী বিশ্বনাথ মন্দির, বারানসী
এই জনপ্রিয় মন্দিরটি ভগবান শিবের প্রতি নিবেদিত৷ এই মন্দিরটিও স্বর্ণ মন্দির নামে পরিচিত৷ মারাঠা সাম্রাজ্যের মহারাণী অহল্যাবাঈ হোলকার 1780 সালে এই মন্দিরটি তৈরি করেন৷ দুটি গম্বুজ সোনা দিয়ে আচ্ছাদনে প্রস্তাব দেন পাঞ্জাব কেশরী মহারাজ রনজিৎ সিং৷ তৃতীয় সোনার গম্বুজটি তৈরির প্রস্তাব দেন উত্তর প্রদেশ সরকারের ধর্ম ও সংস্কৃতি ব্যবস্থাপক মন্ত্রক৷
এই মন্দিরগুলি প্রমাণ করে যে প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্য নিখুঁত গঠনশৈলি এবং প্রযৌক্তিক সাফল্যের প্রতীক ছিল৷