Published: 04 সেপ্টে 2017
বিভিন্ন ধর্মের কাছে সোনার সংজ্ঞা
সোনার আর্থিক, সামাজিক এবং আবেগতাড়িত মূল্যের পাশাপাশি, বিশ্ব জুড়ে অমরত্ব ও শুদ্ধতার খোঁজে ধর্মগুলিও সোনার সন্ধান করে।
বিশুদ্ধতার সার্বজনীন ধর্মীয় চিহ্নসোনা আত্ম-শোধনের প্রতিনিধিত্ব করে বলে ধর্মীয় গ্রন্থগুলি আভাস দেয়৷ বিশুদ্ধতার যথার্থ সংমিশ্রণের মধ্য দিয়ে আত্ম-উৎকর্ষতার জন্য অনুসন্ধানে এই প্রক্রিয়া মূর্ত হয়। অন্বেষক ‘সোনার খোঁজ’ পায় যখন তার আত্মা লোভ, ঘৃণা এং স্বার্থপরতার কলঙ্ক মুক্ত হয়ে এক ভালোবাসা ও দয়ার প্রতিমূর্তিতে পরিণত হয়।
সোনার স্থিতিস্থাপকতা থেকে তাপের উপাদানই এটির চিরস্থায়ীত্বের মর্যাদা অর্জন করে এবং তার ফলে, অমরত্বের সাথে এক সহাবস্থান তৈরি হয়।
বিশ্ব জুড়ে, সোনার দীপ্তি সৌর কিরণের সমান। স্বর্ণ বর্ণ পরিপূর্ণ প্রাণবন্ততা এবং স্পষ্টতা ও জ্ঞানের সাথে স্বর্গীয় ভালোবাসার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনকে ব্যক্ত করে।
খ্রীষ্ট ধর্মদশটি স্বর্গীয় অনুজ্ঞার বাক্সের আবরণটি সম্পূর্ণ সোনায় তৈরি। ঈশ্বরের আদেশে, দু’জন সোনার পরী দিয়ে তা আচ্ছাদিত করে দেওয়া হয় যাদের মাঝে তিনি আবির্ভূত হন তাঁর বিশ্বাসীদের মাঝে এবং তাদের আত্মাকে আশ্বস্ত করেন।
এছাড়াও, ম্যাগি শিশু যিশুকে প্রথমবার দেখার সময় সোনা দিয়েছিল।
চার্চে থাকা মোজাইক এবং প্রতিমূর্তিগুলি সোনালী আভা ছড়ায় যাতে উপাসকদের ওপর স্বর্গীয় আড়ম্বরের ছাপ থাকে। এই প্রথা দ্বাদশ শতাব্দী থেকে চলছে যার পর থেকে পোপ সাদার সাথে সোনার ব্যবহার মঞ্জুর করেন যাতে সেই দিনটির ঔজ্জ্বল্য আরও বাড়িয়ে তোলা যায়। অন্য পাঁচটি রং হল- বেগুনী, লাল, কালো, সবুজ এবং নীল-এগুলির প্রতিটিই একটি আলাদা বৈশিষ্ট্যকে চিহ্নিত করে, যেমন প্রায়শ্চিত্ত।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, ট্যালেন্ট সোনার ওজন মাপার একটা ইউনিট ছিল। এক ট্যালেন্টে প্রায় 34.3 কেজি হয়। প্রতি গ্রামে Rs 3,200 নিয়ন্ত্রক হার ধরে হিসাব করলে, এক ট্যালেন্টের মূল্য এখন Rs 10,97,600 (প্রায় 11 লাখ টাকা)।
অনুসঙ্গী: 6টি সহজ তালিকা যা ব্যাখ্যা করবে ভারতবর্ষের স্বর্ণ প্রীতি
বাইবেলেও সোনার অনেক উল্লেখ পাওয়া যায়।
- পিশন, ইডেন উদ্যান দিয়ে বয়ে যাওয়া জলপথ, ঘেরা রয়েছে হাভিলা নামক এক সোনার রাজ্য দিয়ে। হাভিলার সোনা তার গুণমানের জন্য জ্ঞাত।
- আরেকটি উদাহরণ হল যে 24জন প্রবীণ ব্যক্তি ঈশ্বরের সিংহাসন ঘিরে বসে আছেন তাঁরাও সোনার মুকুট পরে আছেন এবং তাদের শাশ্বত সোনার বাটি উচিয়ে ধরেছেন। সাধু ব্যক্তিদের প্রার্থনা থেকে ঈশ্বর এসে ধরা দিয়েছেন সোনার বাটিতে। ঈশ্বরের সিংহাসন ঘিরে বসে থাকা 24 জন প্রবীণ সোনার মুকুট পরে থাকে।
- এছাড়াও আরও পাঁচটি সোনার রাজ্যের কথা পাওয়া যায়-ওফির, পারভেম, সেবা, টারশিশা এবং উফাজ।
- হিসাবে প্রায় সাতটি হিব্রু শব্দ সোনার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। Zâhâb, হল প্রথম শব্দ যেটি খুবই প্রচলিত এবং এমন একটি শব্দ থেকে উদ্ভূত যার অর্থ চকচকে। Pâz, হল দ্বিতীয় শব্দ, যেটি পরিশোধিত সোনার জন্য ব্যবহৃত, এছাড়াও এটি স্বর্গীয় বিশুদ্ধতা ও গৌরব বোঝায়।
এবং শুধু বাইবেলেই নয় দৈববাণীর বইতেও সোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়। তিনটে উদাহরণে সাতটি সোনার ল্যাম্পের উল্লেখ আছে এবং বইয়ের ভবিষ্যতবাণী উন্মোচন করার জন্য যিশু যখন জনের স্বপ্নে দেখা দেন তখন তিনি সোনার কোমরবন্ধ পরে ছিলেন।
হিন্দু ধর্মবিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মগুলির মধ্যে একটি। হিন্দু ধর্মে সোনাকে শুদ্ধ ধাতু রূপে দেখা হয় যা জ্ঞান, শিক্ষণ, ধ্যান এবং মানসিক উন্নতিকে চিহ্নিত করে।
হিন্দু ঐতিহ্যে এবং ধর্মীয় অনুশীলনে সোনার ভূমিকা বিজ্ঞানভিত্তিকও। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সোনা যে পরিধান করে তার শক্তি ও পরিবেশে এক ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে বলে বিশ্বাস করা হয়। সোনার তারের মঙ্গল সূত্র নেতিবাচক ভাবনাকে দূরে রাখে বলেও বিশ্বাস আছে।
দেবী লক্ষ্মী হলেন হিন্দুদের ধনসম্পত্তির দেবী, যিনি তাঁর বাম হাত থেকে মাটিতে সোনার কয়েন ফেলছেন দেখা যায়। এই সোনার কয়েনগুলি আধ্যাত্মিক এবং বস্তুগত সমৃদ্ধির প্রতিনিধিত্ব করে। চারটি হাতি সোনার তরী থেকে জল নিয়ে দেবীর ওপর বর্ষন করছে, যা জ্ঞান, বিশুদ্ধতা এবং দাতব্যের সঙ্গে প্রচেষ্টা, কর্তব্য, উদ্দেশ্য, ইচ্ছা এবং পরিত্রাণের শিকলকে শক্তিশালী করার প্রতিনিধিত্ব করে। বিচারের দেবতা-যমের যে চিত্র বর্ণিত আছে তাতে তিনি আগুনের আয়না ও সোনার স্কেলের সেট ধরে আছেন যাতে মৃত্যুর পরের যমালয়ে প্রবেশের সময় মৃত ব্যক্তির আত্মার পরিমাপ করা যায়।
সোনার বেশ পরিহিত মন্দিরে থাকা ঈশ্বরের প্রতিমূর্তির মধ্যে থাকে স্বর্ণকান্তিময় আভা যা ঈশ্বরের ক্ষমতা এবং জ্ঞান সম্পর্কে সমস্ত উপাসকদের আকর্ষিত করে।
শিখ ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, ইহুদি এবং ইসলাম ধর্মেও সোনা স্বর্গীয় বিশুদ্ধতা এবং বিশ্বাসের সংযোগ হিসাবে উপস্থিত।
শিখ ধর্মসোনার সাথে শিখদের বিশিষ্ট যোগাযোগ দেখা যায় ভারতের পাঞ্জাবের অমৃতসরে উপস্থিত অপূর্ব স্বর্ণমন্দিরের মাধ্যমে, যেখানে জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ এবং সামাজিক স্তর নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্ত যায়। 1830 সালে, মহারাজা রঞ্জিত সিং হরমিন্দর সাহিবের গুরুদ্বারটি 162কেজি সোনা দিয়ে মুড়ে দেন, তখন যার মূল্য ছিল 65 লাখ টাকা, এটি তৈরির পরে দু’ শতাব্দী কেটে যায়। আজ, এটি 500 কেজিরও বেশি সোনা দিয়ে ঘেরা রয়েছে।
Related: 7 Amazing Facts about the Golden Temple
বৌদ্ধ ধর্মে, সোনা সূর্য বা আগুনকে চিহ্নিত করে, সূর্যের সাহচর্যের মধ্য দিয়ে- সূর্য হল হিন্দু ধর্মের দেবতা
ইহুদি ধর্মে, সোনা স্বর্গীয় জ্যোতির চিহ্ন, ঈশ্বরের মহিমা।
ইসলাম, ধর্মে সবুজের তুলনায় সোনার রং স্বর্গকে চিহ্নিত করে।
সোনা স্বর্গের অধিপতি-ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তিকে চিহ্নিত করে। এই চিত্রাঙ্কণ তার চমক, শক্তি, নমনীয়তা এবং অসাধারণত্ব থেকে উঠে আসে। তাই, উপাসনার এই প্রতিমূর্তিগুলি সোনা দিয়ে তৈরি করা হয় বা সোনার গহনা দিয়ে সাজানো হয়। উপাসনাস্থলের দেওয়াল ও ছাদও অসাধারণ সোনার কারুকাজ দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয়। ধর্মীয় গ্রন্থ এবং কাহিনীগুলি সোনার আসবাবে আরও ঝকঝকে হয়ে ওঠে যেহেতু দেব-দেবীরা হয় তাতে খায় বা শোয় বা তা পরিধান করে।
সোনার উপস্থিতি ভারতে দেখতে পাওয়া ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুশীলনের ক্ষেত্রেও খচিত রয়েছে। বিয়ে, জন্মদিন, উৎসবের মত বিশেষ কোন অনুষ্ঠানকে শোধন করার জন্য সোনাকে শুভ ক্রয় হিসাবে ধরা হয়। দেবতাদের কাছে সোনা দানের অর্থ তাঁকে তৃপ্ত করা এবং তাঁর আর্শিবাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা। দিওয়ালি, পোঙ্গল, দুর্গা পূজা, ধনতেরাস, দাসেরা এবং নবান্নের সময়ের উৎসব সোনার ক্রয় ও আরাধনা ছাড়া অসম্পূর্ণ।
এইভাবেই সারা পৃথিবী জুড়ে সমস্ত ধর্মে সোনার শুভ এবং অমূল্য সংজ্ঞা রয়েছে।