Published: 15 মার্চ 2018
রাবণ কিভাবে সোনার রাজ্য জয় করেছিল এবং হারিয়েছিল
ভারতের বেশিরভাগ মানুষ রাবণকে রামায়ণের ভয়ঙ্কর রাক্ষস হিসাবে জানলেও কিছু মানুষ তাকে তুখোর জ্ঞানীপুরুষ এবং দেবাদিদেব শিবের একাগ্র ভক্ত হিসাবে চেনে৷ সে দশানন অথবা দশটি মস্তকাবিশিষ্ট ব্যক্তি হিসাবেও পরিচিত ছিল৷ তার দশটি মাথা চারটি বেদ এবং ছ’টি উপনিষদে তার জ্ঞানের দখলকে প্রতীকায়িত করে, যা তাকে অতুলনীয় জ্ঞানী করে তুলেছিল৷ সে বীণা নামক প্রথাগত তারের বাদ্যযন্ত্রও অপূর্ব সুন্দর বাজাতে পারত৷
রাবণ কিভাবে তার অলীক রাজধানী স্বর্ণ-লঙ্কার মালিক হল তা নিয়ে একটি কাহিনী আছে৷ আমাদের পুরাণকথা অনুযায়ী, একবার দেবাদিদেব শিবের স্ত্রী পার্বতী তপস্বীর জীবনে এবং শীতল হিমালয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পরেন৷ তাই, তিনি শিবকে তাদের জন্য একটি গৃহ নির্মাণের অনুরোধ করেন যেখানে সেই দম্পতি যথাযথ জীবনযাপন করতে পারবে৷ এবার, শিব ছিলেন তপস্বী, পার্থিব বস্তুর থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন৷ গার্হস্থ্য জীবনযাপন তাঁর কাছে সম্পূর্ণ ভিনগ্রহের ধারণা৷ তবে একজন সস্নেহ স্বামী হিসাবে, তিনি পার্বতীর অনুরোধ স্বীকার করেন৷
পরবর্তীকালে, শিব রাবণকে প্রকল্পের কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ করেন এবং একটি সোনার প্রাসাদ বানানোর নির্দেশ দেন, যেটি স্বর্ণ-লঙ্কা নামে পরিচিত৷ রাবণ প্রাসাদ নির্মাণের সোনার জন্য তখন তার সৎভাই কুবেরের সান্নিধ্যে যায়, যে ছিল সেই সময়ের সবথেকে সমৃদ্ধশীল ব্যক্তি৷ কুবের হলুদ ধাতু দানের পর, রাবণ রাবণ শিবের জন্য সোনার প্রাসাদ বানাতে স্থপতি তথা নির্মাণ প্রকৌশলী বিশ্বকর্মাকে নিযুক্ত করে৷ কিছু কাল পরে, বিশ্বকর্মা একটি অনন্য এবং অদ্বিতীয় সোনার প্রাসাদ নির্মাণ সম্পন্ন করে৷
দেবাদিদেব শিব প্রথা অনুযায়ী একটি ‘গৃহপ্রবেশ পূজা’ করবে বলে ঠিক করেন৷ ভারতে, হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে, নতুন বাড়িতে প্রবেশের পূর্বে ঈশ্বরের কাছে উপহার প্রস্তাব দেওয়ার প্রচলন এখনও বর্তমান আছে৷ রাবণকে পুরহিতের কাজ করতে বলা হয় যেহেতু সে ছিল অন্যতম জ্ঞানী বিশেষজ্ঞ৷
যখন তার ‘দক্ষিণা’ অথবা পারিশ্রমিকের সময় আসে, রাবণ সবাইকে চকিত করে সেই প্রাসাদটি তার মূল্য হিসাবে চায়৷ সম্ভবত এটা শিবেরই ইচ্ছা ছিল যা কাজ করেছিল (তিনি কখনই প্রাসাদে থাকতে চান নি) অথবা হয়তো, রাবণ অসাধারণ প্রাসাদ দেখে লোভী হয়ে পরেছিল৷ তাই, দেবাদিদেব শিব স্বর্ণ-লঙ্কা রাবণকে দিয়ে হিমালয়ে তাঁর গৃহ কৈলাশ পর্বতে ফিরে যান৷ শিবের একনিষ্ঠ ভক্ত নন্দী রাবণের এইরূপ আচরণে ক্ষুব্ধ হয় এবং অভিশাপ দেয় যে তার সাধের প্রাসাদ সামান্য এক বানরের জন্য ধ্বংস হবে৷
কিছু বছর পরে, বানর দেবতা হনুমান দেবী সীতার খোঁজে স্বর্ণ লঙ্কায় পৌঁছায়৷ রাবণ তখন ক্ষমতা ও সমৃদ্ধির দম্ভে মাতাল হয়ে হনুমানকে অপমান করে এবং তাঁর লেজে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার আদেশ দেয়। হনুমান পালিয়ে যায় এবং দ্রুত রাবণের সোনার প্রাসাদকে ভষ্মে পরিণত করে। এইভাবেই রাবণ তার সোনার প্রাসাদ হারায়।