Published: 20 ফেব্রু 2018
ভারতের সোনা, ইংল্যান্ডের মুনাফা?
আপনি কি জানতেন যে স্যার আইজ্যাক নিউটন-হ্যাঁ, সেই ব্যক্তিই যার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং গতির সূত্র আমরা উচ্চ বিদ্যালয় এবং কলেজে পড়ি-সেই ব্যক্তিই ভারতে এসেছিলেন? আর যেরকম অনেক ওয়েবসাইটই দাবি করে সেইরকম তিনি কিন্তু ভারতের প্রাচীন মহাজ্ঞানী ব্যক্তি আর্যভট্টের আবিষ্কৃত মাধ্যাকর্ষণের সূত্র অথবা গণনাপ্রণালী চুরি করতে আসেননি। তিনি 18শ শতকের প্রথমদিকে রয়াল মিন্টের মাস্টার হয়ে এসেছিলেন।
1699 সালে, নিউটনকে রয়াল মিন্টের মাস্টার হিসাবে নিয়োগ করা হয়, যিনি ছিলেন ব্রিটেনের মুদ্রা এবং সেগুলির বিনিময় হারের জন্য দায়বদ্ধ, এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ্য সোনা ও রূপো। তিনি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে তার শিক্ষাবিদের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে এই পদটি গ্রহণ করেন এবং 1727 সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত এই পদেই অধিষ্ঠিত ছিলেন।
1702 সালে, ইংল্যান্ড স্পেনীয় উত্তরাধীকারের যুদ্ধে ফ্রান্সের সাথে একত্রিতভাবে নেদারল্যান্ড ও স্পেনের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এটি একটি 13-বছরের দীর্ঘ এবং খরচ সাপেক্ষ যুদ্ধ ছিল যেটি 1714 সালে শেষ হওয়ার আগেই ইংল্যান্ডের সোনার রিসার্ভ এবং মুদ্রা খালি করে দেয়। ভারতে, সোনা ছিল প্রচুর, 18শ শতকের প্রথম দিকে এটির দাম 1:10 (রূপো ও সোনার অনুপাত) থেকে 1:9তে পরে যায়। সেই সময় ইংল্যান্ডে এই অনুপাত ছিল 1:15। তাই, নিউটন ভারতে আসে এটা দেখার জন্য যদি ইংল্যান্ডের সরকারি তহবিলের কিনারা করার জন্য তিনি ‘সস্তা’ সোনা কিনতে পারেন।
শুধু সেই সময়ই ইংল্যান্ড ভারতের থেকে সোনা নেয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝের বছরগুলিতে, ভারতে সোনার অভ্যন্তরীন দাম ছিল প্রতি 10গ্রামে মাত্র 21টাকা, যেখানে আন্তর্জাতিক দাম ছিল প্রতি 10 গ্রামে 34টাকা। ফলত সোনার রপ্তানী লাভজনক ছিল।
1931 সালে, ব্রিটেনের সোনার মান্যতা বন্ধ হয় এবং পাউন্ড স্টার্লিং মুদ্রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেহেতু ভারতীয় রুপি বা টাকা এদিকে স্টার্লিং করে। সোনার দাম লন্ডনে তুলনামূলক বেশি ছিল, তাই ভারত সোনার রপ্তানিকারক হয়ে ওঠে। 1931 থেকে 1938সালের মধ্যে ভারতের সোনার রপ্তানি 250 মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি ছিল।
এটি কেন ঘটেছিল? ভারতীয় পরিবারগুলি আর্থিক খরচের জন্য সোনার সঞ্চয়গুলির তরলীকরণ করেছিল অর্থাৎ টাকায় পরিণত করেছিল এবং ঋণ পরিশোধ করেছিল। আর এটি করার মধ্য দিয়ে, তারা ইংল্যান্ডে তরলকৃত সম্পদগুলি স্থানান্তর করার বিষয়টিকে সহজতর করে তুলেছিল, যার ফলে ওই দেশটি তার ব্যবসার ভারসাম্য ও আমদানি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সমর্থ হয়েছিল। এটি আবশ্যিকভাবে 1929সালের মহামন্দার প্রভাবকে প্রশমিত করেছিল। ভারতের সোনা ইংল্যান্ডকে একাধিক পথে এবং একাধিকবার সাহায্য করেছিল।