Published: 10 সেপ্টে 2018
এক নজরে ভারতের স্বর্ণ-নীতি
ভারতের স্বর্ণ সংক্রান্ত নিয়ম ও নীতিসমূহ বহুবছর ধরে গড়ে উঠেছে | বর্তমানে তা আরো একরৈখিক ও স্বচ্ছতার দিকে অগ্রসর হয়েছে| 2018 সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কেন্দ্রীয় বাজেট বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন যে স্বর্ণ-নীতিকে সম্পদ শ্রেণীতে উন্নীত করার জন্য কেন্দ্র সরকার অদূর ভবিষ্যতেই এক ব্যাপক স্বর্ণ-নীতি প্রনয়ণ করতে চলেছে | যার অর্থ, শেয়ার, বন্ডস ও পণ্যদ্রব্যসমূহের মতোই স্বর্ণ-লগ্নীকেও সম্পদ সংক্রান্ত একটিই ছাতার তলায় শ্রেণীবদ্ধ করা |
সম্প্রতি ভারতীয় স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন অথবা প্রস্তাবিত হলমার্ক বিষয়ক নিয়ম-কানুন ভারতের সোনা ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এক বিশ্বস্ততার জায়গা তৈরী করতে চলেছে | স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত এই নীতিগুলি কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে তা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক |
সীমাবদ্ধ কালপর্ব (1947 - 1962)
এই সময়পর্বের নীতিগুলি মূলত সোনা আমদানির বিভিন্ন নিয়ম-কানুন ও দেশীয় বাজারে সোনার দামের পর্যালোচনার পাশাপাশি সোনা পাচার হ্রাসের দিকটিতেও লক্ষ রেখে নির্ধারিত করা হয়েছিল|
এফ.ই.আর.এ. অথবা বৈদেশিক বিনিময় প্রবিধান আইন (1947) টি বৈদেশিক বিনিময় বিষয়ক লেনদেন এবং মুদ্রা ও সোনার বাটের আমদানি ও রপ্তানী নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেছিল |
1956 সালে ভারত সরকার মুদ্রা নির্গমনের জন্য স্বর্ণ-সমর্থিত আনুপাতিক জমা ব্যবস্থা থেকে ন্যূনতম জমা ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হয়| যার অর্থ ছিল আর.বি.আই.-কে 200 কোটি টাকার সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রা নিজ হেপাজতে রাখতে হবে| যার মধ্যে অন্তত 115 কোটি টাকার সোনা থাকতে হবে |
1962 সালে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বিরোধ-এর কারণে ভারতে বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায় | এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষের অর্থ প্রথম চালু করা গোল্ড বন্ড স্কীমে রাখার জন্য উৎসাহিত করা হয়|
নিষিদ্ধ সময়পর্ব (1963 - 1989)
1962 সালে সরকার সোনার উৎপাদন ও লেনদেনর ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং এটি পরবর্তী কালে স্বর্ণ নিয়ন্ত্রণ আইন (1968). এ পরিণত হয় | অত্যাধিক সোনা আমদানি ভারতীয় টাকার মূল্যহ্রাস সূচিত করে| এই সমস্যাটির প্ৰতিবিধানকল্পে এবং সোনার ব্যক্তিগত অধিকার সীমায়িত করার জন্য এই আইনটি চালু করা হয়েছিল
স্বর্ণ নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধি-নিষেধ :
- 14 ক্যারেটের উপরে সোনার গহনা নির্মাণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয় |
- ব্যক্তিগত অধিকারে সোনার গহনা থাকার একটি সুনির্দিষ্ট সীমা স্থাপন করা হয়েছিল |
দেশের মধ্যে সোনা পাচার হ্রাস ও বাজেট ঘাটতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা তৈরী করা হয় | এই রকমই এক পরিকল্পনা ছিল যেখানে জনগণকে তাদের অঘোষিত সম্পদ প্রকাশ করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছিল যেখানে জনগণকে তাদের অঘোষিত সম্পদ প্রকাশ করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছিল |
অন্যান্য উদ্দ্যোগের মধ্যে স্বর্ণ-নিলামের ব্যবস্থা করা (1978) ও স্বর্ণ বন্ডের প্রচলনও একই উদ্দ্যেশে পরিচালিত হয়েছিল|
উদারনীতির সময়পর্ব (1990 - 2011)
এই সময়পর্বে সরকার স্বর্ণ শিল্পের ক্ষেত্রে কিছু শীথিলতা প্রদান করতে থাকে |
1990 সালে সরকার স্বর্ণ নিয়ন্ত্রণ অধিনিয়ম রদ করে | আমদানী শুল্ক বৃদ্ধির জন্য সরকার সোনার অবাধ আমদানীতে সম্মতি দেয় |
অনাবাসী ভারতীয় যোজনা (1992) ও বিশেষ আমদানী লাইসেন্স যোজনা(1994) র মাধ্যমে এন.আর.আই.-দের ভারতে সোনা বহন করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছিল |
1997 সাল থেকে বিভিন্ন ব্যাঙ্ককে দেশের মধ্যে সোনা আমদানী করার ছাড়পত্র দেওয়া হয় |
1999 সালে সকার স্বর্ণ আমানত স্কিম (জি. ডি.এস.)-এর মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় সোনা সংগ্রহ করে এবং স্বর্ণ ধারকদের আয়ের ওপরে সুদ উপার্জনের সুযোক করে দেয়|
2002 থেকে পরবর্তী সময়ে সোনার ব্যবহার আরো সুবিধাজনক হয়ে ওঠে | এই সময় থেকেই ব্যাংকগুলোকে স্বর্ণ-মুদ্রা বিক্রয়ের অধিকার দেওয়া হয় এবং 2008 সাল থেকে জনৈক যে-কেউই স্থানীয় ডাকঘর থেকে সোনা কিনতে পারত |
ভারতে স্বর্ণ বিনিময় বাণিজ্য তহবিল (ই.টি.এফ.) চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সোনার ব্যক্তিগত মালিকানা সর্ব্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় 2007 সালে| কম্পিউটারের মাধ্যমে সোনায় লগ্নী তার গুণাগুণ বিষয়ে এবং চাপমুক্ত জমানোর ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয় |
সম্পর্কিত :প্রথম লগ্নীকারকদের স্বর্ণ ই.টি.এফ.-এ লগ্নী সংক্রান্ত নির্দেশাবলী
2008 সালের বিশ্বজনীন অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সোনার প্রতি ভোক্তাদের আসক্তি বেড়ে যায় | ফলত সোনার চাহিদা তুঙ্গে ওঠে এবং দামও তিনগুন বেড়ে যায় |
উদারনীতির সময়পর্বের শেষের দিকটি চিহ্নিত হয়ে আছে দেশের সর্বমোট সোনার চাহিদার ব্যাপক বৃদ্ধির কারণে যা 2010 সালে 1001.7 টন স্পর্শ করেছিল |
মধ্যবর্তী সময়পর্ব (2012 - 2013)
বিশ্বজনীন অনিশ্চয়তা ও স্বদেশীয় শাসননীতির প্রভাব ভারতীয় রপ্তানী ও বিনিয়োগ প্রবাহকে প্রভাবিত করেছিল | সোনার চাহিদাকে কমাতে, সরকার পরবর্তীকালে আবারো মধ্যবর্তী নীতি প্রণয়ন করে |
সাল থেকে 2012 and 2013, মধ্যে সোনার আমদানী শুল্ক 2% থেকে 10% পর্যন্ত বাড়ানো হয়
ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের মাধ্যমে সোনার মুদ্রা আমদানী করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় |
80 : 20 নিয়মের প্রবর্তনের দ্বারা আমদানিকারক সোনার 20% রপ্তানী বাধ্যবাধকতা লাগু করা হয়| এই পরিকল্পনা অনুসারে আমদানীকৃত সোনার ন্যূনতম 20%-কে নতুন কনসাইনমেন্টের পূর্বেই রপ্তানী করতে হবে | পরবর্তী অংশের আমদানী পূর্বের রপ্তানী বিষয়ক আদেশনামা পালন করলে তবেই অনুমোদিত হবে
স্বচ্ছতার সময়পর্ব (2014 - 2018)
এই সময়পর্বে সরকার দেশের তামাম অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার বিকাশ ঘটিয়েছে |
2014 সালে 80 : 20 আইনটি বিলুপ্ত করা হয় এবং স্বর্ণমুদ্রা আমদানী করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞাটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়|
2015 সালে, 1999 সালের স্বর্ণ আমানত স্কিম-টিকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয় স্বর্ণ নগদীকরণ স্কিম নামে| ওই বছরেই সার্বভৌম স্বর্ণ বন্ড- এর প্রচলন করা হয় বিনিয়োগকারীদের পেপার বন্ডে উৎসাহিত করে তোলার জন্য |
ভারতের সর্বপ্রথম জাতীয় স্বর্ণমুদ্রা, ভারতীয় স্বর্ণমুদ্রা (আই.জি.সি.) – সালে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক চালু করা হয় |
সম্পর্কিত :ভারতীয় স্বর্ণমুদ্রা : জাতীয় গৌরবের প্রতীক
2016 সাল নাগাদ সরকার 2 লক্ষ টাকার ওপর সমস্ত কেনাকাটায় প্যান কার্ডের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে| যে-সব জহুরীদের বছরে 12 কোটি টাকার ব্যবসা হয় তাদের 1% আবগারি শুল্ক ধার্য্য করা হয় | এছাড়াও 99.5% পরিশুদ্ধ ব্র্যান্ডেড স্বর্ণমুদ্রার ক্ষেত্রে 1% আবগারি শুল্ক রদ করা হয়|
2018 সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে সরকার ঘোষণা করে যে স্বর্ণ-নীতিকে সম্পদ শ্রেণীতে উন্নীত করার জন্য কেন্দ্র সরকার অদূর ভবিষ্যতেই এক ব্যাপক স্বর্ণ-নীতি প্রনয়ণ করতে চলেছে| এছাড়াও সরকার গ্রহীতা-বান্ধব ও বাণিজ্যিক ভাবে দক্ষ পদ্ধতির মাধ্যমে দেশের মধ্যে স্বর্ণ বিনিময়কে নিয়ন্ত্রণ করার এক ব্যবস্থা চালু করতে চলেছে| স্বর্ণ নগদীকরণ স্কিমটিকে আবার নতুনভাবে তৈরী করা হবে যাতে জন-সাধারণ সহজেই একটি ঝঞ্ঝাটমুক্ত স্বর্ণ আমানত তহবিল খুলতে সক্ষম হয় |
এই সব বিষয়গুলি এটাই প্রমান করে যে ভারতের স্বর্ণ ক্রেতাগণের সুবিধার দিকে তাকিয়ে সরকার এই পরিবর্তিত স্বর্ণ-নীতি প্রণয়নের কাজ করে চলেছে|