Published: 22 অক্টো 2018
রোমান সাম্রাজ্যে সোনার গুরুত্ব
মানব সমাজের প্রথমবার সোনার সাথে খ্রী.পূ. 3000 অব্দে পরিচয় হওয়ার খুব অল্প দিনের মধ্যেই প্রাচীন সভ্যতাগুলিতে অত্যন্ত গুরুত্ব অর্জন করে৷
রোমানরা প্রথম মুদ্রার একটি জনপ্রিয় রূপ হিসাবে সোনার কয়েন তৈরি করার কৃতিত্ব পায়৷ রোমান যুগে সোনা গহনা প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও জনপ্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হত৷ সোনার গহনা ছিল সেই সময় সম্পদ ও সমৃদ্ধির প্রতীক৷
সময়ের সাথে সোনা বাসনপত্র এবং অন্যান্য গৃহস্থালি পণ্য তৈরির জন্য ব্যবহৃত হতে শুরু করে, অবশ্য সেটির দাম কেবলমাত্র সমাজের উপর মহলের মানুষরাই দিতে পারত৷ মনে করা হত যে বাড়িতে যত বেশি সোনা পাওয়া যাবে, সেটি তত সমৃদ্ধশীল৷
রোমানরা মৃতদের সোনার গহনা দিয়ে সমাধিস্থ করার প্রথাটি অনুসরণ করত যাতে সেগুলি তারা মরণোত্তর কালেও সঙ্গে নিতে পারে৷
কোথা থেকে রোমানরা তাদের সোনা পেয়েছিল?
রোম প্রাকৃতিকভাবে কখনই সোনায় সমৃদ্ধ ছিল না এবং সবসময়ই সেটি অর্জনে ধীর গতিসম্পন্ন ছিল৷ প্রথম সোনা আবিষ্কার হয়েছিল পো নদীর পশ্চিমস্থ আল্পস আর দক্ষিণ পাদদেশ৷ দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধ (খ্রী.পূ. 218-201 অব্দ) সম্ভবত সবথেকে রোমান ইতিহাসে সোনার সাপেক্ষে তাৎপর্যপূর্ণ সন্ধিক্ষণ৷
একবার রোমানরা স্পেন জয় করে নেওয়ার পর, তারা গ্রানাডা সমতল আর সিয়েরা নেভাদা পর্বতমালার ঢালে মালাঙ্গা জেলার আডুযার অববাহিকায় সোনা খনন করে৷ এই অঞ্চলগুলিতে সোনার সন্ধান তারিখ থেকে পাওয়া যেতে পারে৷ আরেকটি বড় সংস্থান জুলিয়াস সিজারের ব্রিটেন জয় থেকে এসেছিল৷
রোমান সাম্রাজ্য বৃদ্ধির সাথে সাথে, সোনার প্রতি ক্ষুধাও বাড়তে থাকে৷ তাদের জয় তাদের ভারসেইল, রেইন নদীর পাশাপাশি মধ্য আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূল এবং মিশরের অংশসমূহ-প্রকৃতপক্ষে সমগ্র বিশ্ব থেকে খনন করে সোনা এনে দিত৷ 49 খ্রীষ্টাব্দে, সম্রাট ক্লডিয়াসের স্ত্রী অ্যাগ্রিপিনা এটি টিউনিক পরেছিলেন যেটি সোনার সুতোয় তৈরি হয়েছিল৷ একটি সময় রোমানদের কাছে এতটাই সোনা ছিল যে তারা প্রদর্শনের জন্য খাঁটি সোনায় বিশাল বড় মুর্তি তৈরি শুরু করেছিল৷
রোমান সোনার গহনা
রোমান সাম্রাজ্যে, সোনা একজন ব্যক্তির সম্পদ, সমৃদ্ধি এবং সামাজিক স্থিতির পরিচায়ক ছিল৷
যে দিন থেকে সোনা ঈশ্বরের ধাতু হিসাবে বিবেচিত হয়েছে এবং বিশ্বাস করা হয়েছে যে এটি সূর্যের থেকে নেমে এসেছে, সেদিন থেকে বিপুলভাবে অলংকার প্রস্তুতিতে এটির ব্যবহার শুরু হয়৷ কোন রকম খারাপ শক্তি থেকে বাঁচানোর জন্য বুল্লা নামে কবচ ছোট ছেলেদের জন্ম থেকে পরানো হয়৷ ফেলিক চিহ্ন দেওয়া সোনার আংটিগুলি ছিল সবথেকে জনপ্রিয়-আর কখনও কখনও একমাত্র-গহনা যেটি পুরুষরা পরত৷
রোমান মহিলারা নেকলেস, ব্রেসলেট এবং বাহুবন্দ পরতে পছন্দ করতেন৷ তাদের হাতে সবসময় সাতটির বেশি গহনা থাকত৷ কুণ্ডলিত সাপের আকারে সোনায় তৈরি ব্রেসলেট এদের মধ্যে ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়৷ এই ডিজাইনটি অমরত্বকে প্রতীকায়ীত করত৷
রোমান সোনার মুদ্রা প্রচলন
আপনি কি জানতেন যে ‘আউরেস’ ছিল রোমান জগতে প্রাথমিক সোনার আর্থিক ইউনিক? এগুলি খ্রী.পূ. তৃতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে খ্রীষ্টিয় তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়েছিল৷
এই যুগ চলাকালীন, কয়েন উৎপাদনের জন্য সোনার পুনর্ব্যবহার করা হত, যেগুলি বিস্তৃতভাবে বন্টিত হয়েছিল৷ সাম্প্রতিক সম্রাটের মুখ কয়েনগুলির মধ্যে খোদিত থাকত৷ অগাস্টাস এদের মধ্যে সবথেকে বিস্তৃতভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল৷
রোমানরা স্পেনে হাইড্রলিক খনন আবিষ্কারের পর সোনার খননকার্য বিশেষভাবে দামি হয়ে যায়৷ যদিও এই পদ্ধতি গভীর খননের তুলনায় বেশি সোনা উৎপাদন করেছিল, এটা রি-চ্যানেলিং এবং নদীর ধ্বংসের জন্যও দায়বদ্ধ ছিল৷ রোমানরা সোনা খনন করত, কয়েন তৈরি করত এনং সেগুলিকে তাদের সাম্রাজের সীমান্ত পেরিয়ে অনেকটা দূরে বন্টন করত৷
সোনা প্রাচীন রোমের অর্থনীতিতে অসাধারণ অবদান রেখেছিল, সাথে সেটিকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্য করে তুলেছিল৷ সোনার প্রতি রোমানদের ভালবাসা অন্যান্য অনেক সভ্যতাকে অনুপ্রাণিত এবং প্রভাবিত করেছিল যা এই মূল্যবান ধাতুটিকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখার জন্য বিশ্বকে পথ দেখিয়েছে৷