Published: 12 সেপ্টে 2017
জারদৌসি-সোনার জড়ি
ভারতীয়রা বর্ণাঢ্যভাবে উৎসব এবং অনুষ্ঠান উদযাপন করে; প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানের জন্যই নতুন পোশাকের সাথে সোনার গহনা সমেত আনুষঙ্গীক কেনা হয়। পোশাকগুলির পারে জরি (সোনালী-লেস)দিয়ে প্রায়ই সোনার জড়ির সূচিকর্মে ডিজাইন করা থাকে।
সোনার সূচিকর্মের একটি বিখ্যাত ধরণ হল জারদৌসি; এটির উৎসস্থল পার্সিয়া, পারসিক শব্দ “জার”-এর অর্থ হল সোনা এবং “দৌসি”-র অর্থ হল এমব্রয়ডারি বা সূচিকর্ম-এই সমৃদ্ধশীল শিল্পকর্মটি মুঘল আমলে ভারতের মাটিতে তার পথ করে নিয়েছিল। এই সূচিকর্মটি ভারতীয় পাঠ্যে ঋগ্বেদের সময় থেকে উল্লেখিত এবং মুঘলদের তাঁবুর প্রাচীরের সাথে সাথে ভারতীয় মহারাজদের রাজকীয় পোশাকে স্পষ্টতই ব্যবহৃত হত।
পরবর্তী সময়, নবাবের শহর লক্ষ্ণৌ নবাবদের উচ্চ চাহিদার কারণে এই ধরণের সূচিকর্মের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে। 2013 সালে, “লক্ষ্ণৌ জারদৌসি” জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশান (GI) দ্বারা একটি জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশান রেজিস্ট্রিতে একটি ব্র্যান্ড হিসাবে চিহ্নিত হয়। বর্তমানে, একাধিক ক্ষুদ্র উদ্যোগ বা এন্টারপ্রাইজ লক্ষ্ণৌ জারদৌসিতে বিশেষায়িত হয়ে সারা ভারতে তথা পাকিস্তান ও ইরানে খ্যাত হয়েছে।
এই নিখুঁত সূচিকর্মটিতে সোনার জড়ি ব্যবহৃত হয় যেটি সোনার সংকর থেকে তৈরি হয়। প্রথমে ধাতুপিণ্ড গলানো হয় এবং তারপর সূক্ষ্ম তার তৈরির জন্য সছিদ্র স্টিলের পাতের মধ্য দিয়ে সেটি পেষণ করা হয় যেটি পুনরায় হাতুরি দিয়ে চেপ্টা করা হয়। তারপর মোটা, স্প্রিংয়ের মত জারদৌসি জড়ি তৈরি করার জন্য এই তারগুলিকে সিল্কের মধ্য দিয়ে পাকানো হয়। অতিরিক্ত মাত্রা যোগ করার জন্য কোন টুকরোয় সিকুইন বা বিশেষ স্বর্ণমুদ্রা এবং পুঁতির মত অন্যান্য সোনার অলঙ্করণ যুক্ত করা হয়।
যদিও আধুনিক মেশিন এখন প্রথাগত পদ্ধতির স্থান দখল করেছে, তবে লক্ষ্ণৌর বংশগুলি তাদের দক্ষতাকে সংরক্ষিত করে রেখেছে যাতে তারা নতুন প্রজন্মের কাছে এই ধরণের সূচিকর্মের সৃজন শিখিয়ে যেতে পারে।
ভারত তথা বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে জারদৌসি কাজের চাহিদার জন্য বিশেল পরিসরের পোশাকে এবং আনুষঙ্গীকে এটির শৈল্পিক ছোঁয়া থাকে, উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ড্রেস, কোট, পার্স, বেল্ট, স্টোল, জুতো ইত্যাদি। বিশ্ব জোড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলিউডের অভিনেত্রীরা প্রায়ই সুন্দর জারদৌসি ডিজাইনের পোশাক পরেন।